আহ, ভলিবল! যখনই খেলার কথা ভাবি, এই খেলাটা আমার মনে এক দারুণ উত্তেজনা নিয়ে আসে। আজকাল চারদিকে দেখছি, ছোট থেকে বড় – সবার মধ্যেই ভলিবলের প্রতি এক নতুন ভালোবাসা জন্মাচ্ছে। মনে আছে, আগে যখন স্কুল বা কলেজে খেলতাম, তখন এত মাতামাতি দেখিনি। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পাড়ার মাঠেও ভলিবলের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। সত্যি বলতে কি, আমিও নিজেও অবাক হয়েছি এই পরিবর্তনের ঢেউ দেখে!
এর পেছনে নিশ্চয়ই কিছু বিশেষ কারণ আছে, তাই না? আমি তো রীতিমতো অভিভূত হয়ে যাই যখন দেখি কত সহজে মানুষ এই খেলাটার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে আর এর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছে। শুধু তাই নয়, এর স্বাস্থ্যগত দিক এবং সামাজিক বন্ধন তৈরির ক্ষমতাও অসাধারণ। আমার মনে হয়, বর্তমান প্রজন্মের জন্য ভলিবল যেন একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এই খেলাটা শুধু শারীরিক ফিটনেসই বাড়ায় না, বরং দলগত কাজ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও শাণিত করে। বিশেষ করে, বর্তমানে যখন আমরা সবাই স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকে ঝুঁকছি, তখন ভলিবল সত্যিই একটা দারুণ বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভলিবল খেলে আমি যেমন মানসিক শান্তি পাই, তেমনি একটা দারুণ শারীরিক ওয়ার্কআউটও হয়। এই আধুনিক যুগে যেখানে আমরা সবাই স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটাই, সেখানে ভলিবল আমাদের বাইরে বের করে শরীরচর্চায় উৎসাহিত করছে। আমার তো মনে হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে ভলিবলের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। কেন এই খেলাটা এতটা মানুষের মন জয় করছে, আর এর পেছনের রহস্যগুলো কী – চলুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ভলিবলের মাঠে এক নতুন দিনের শুরু: কেন এই পরিবর্তন?

সত্যি কথা বলতে কি, আজকাল ভলিবল খেলার প্রতি মানুষের আগ্রহটা কেমন যেন আকাশছোঁয়া! যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়েই যত উন্মাদনা দেখতাম। ভলিবল ছিল অনেকটা স্কুল বা কলেজের বার্ষিক স্পোর্টস ইভেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এখন সময়টা পুরোই পাল্টে গেছে! পাড়ার মোড় থেকে শুরু করে বড় বড় খেলার মাঠ, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ফিডেও ভলিবলের দাপট চোখে পড়ার মতো। আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ লুকিয়ে আছে। একদিকে যেমন খেলাটার নিজস্ব সহজবোধ্যতা রয়েছে, তেমনই আধুনিক জীবনযাত্রার কিছু চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতাও এর জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। মনে পড়ে, একবার আমার এক বন্ধু ভলিবল খেলা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে সে বলেছিল, “এরকম একটা গতিময় অথচ কম ইনজুরিযুক্ত খেলা আর হয় না!” আমিও তার সাথে একমত। দ্রুত পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় যখন আমরা সবাই সময় বাঁচাতে চাই, তখন ভলিবল অল্প সময়েই দারুণ বিনোদন ও ব্যায়ামের সুযোগ করে দিচ্ছে। এই খেলাটা শুধু শারীরিক সক্রিয়তাই বাড়ায় না, বরং খেলোয়াড়দের মধ্যে এক আত্মিক বন্ধনও গড়ে তোলে, যা সত্যি অভাবনীয়।
আধুনিক জীবনের দ্রুত ছন্দ এবং ভলিবল
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনটা যেন এক দৌড়ে পরিণত হয়েছে। সবার হাতে সময় কম, অথচ সুস্থ থাকার আকাঙ্ক্ষাটা কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি। এই দ্রুতগতির জীবনে ভলিবল যেন এক আদর্শ সমাধান হিসেবে হাজির হয়েছে। যেখানে ফুটবল বা ক্রিকেটের জন্য বড় মাঠ, অনেক সরঞ্জাম এবং দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়, সেখানে ভলিবলের জন্য অপেক্ষাকৃত কম জায়গা এবং ন্যূনতম কিছু সরঞ্জামই যথেষ্ট। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অফিসের ব্যস্ততা সেরে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে অল্প সময়ের জন্য ভলিবল খেলাটা দিনের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। এটা এমন একটা খেলা যেখানে আপনি অল্প সময়েই দারুণ শারীরিক পরিশ্রম করতে পারবেন, ঘাম ঝরাতে পারবেন এবং মনটাও হালকা হবে। বিশেষ করে, যারা জিমে গিয়ে একঘেয়ে ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন না, তাদের জন্য ভলিবল এক দারুণ বিকল্প। এটা শুধু একটা খেলা নয়, এটা যেন আধুনিক জীবনের স্ট্রেস কমানোর এক অব্যর্থ ওষুধ। ভলিবলের প্রতিটি মুহূর্তে একটা নতুন উত্তেজনা থাকে, যা আমাদের মনকে সতেজ রাখে এবং প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ও ভলিবলের প্রসার
আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো কিছু জনপ্রিয় করতে এর জুড়ি মেলা ভার। ভলিবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা আছে। আমরা প্রায়ই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভলিবল খেলার দারুণ সব ভিডিও ক্লিপস, রোমাঞ্চকর ম্যাচ হাইলাইটস এবং আকর্ষণীয় টিউটোরিয়াল দেখতে পাই। মনে আছে, একবার ইনস্টাগ্রামে এক ভলিবল তারকার একটি দারুণ স্পাইকের ভিডিও দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং খেলার প্রতি আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের বিষয়বস্তু নতুন প্রজন্মকে ভলিবলের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। তারা দেখছে কিভাবে খেলোয়াড়রা এক অনন্য দক্ষতায় বলটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দলগতভাবে কাজ করছে। এছাড়া, অনেক ভলিবল ক্লাব ও একাডেমি তাদের কার্যক্রম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে নতুন খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করছে। এই ডিজিটাল যুগে যেখানে ইনফ্লুয়েন্সাররা নতুন নতুন ট্রেন্ড সেট করছেন, সেখানে ভলিবল ইনফ্লুয়েন্সাররাও খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছেন। আমার তো মনে হয়, এই ডিজিটাল প্রচারণার কারণেই এখন ঘরে ঘরে ভলিবলের নাম শোনা যায় এবং তরুণ প্রজন্ম এটিকে ক্যারিয়ারের সুযোগ হিসেবেও দেখছে।
শারীরিক সুস্থতার সহজ সমাধান: ভলিবল যেভাবে সাহায্য করে
শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এখন আমাদের সবার জীবনেই একটি প্রধান লক্ষ্য। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা আর স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটানোর ফলে অনেকেই চাইলেও শরীরচর্চার জন্য আলাদা করে সময় বের করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে ভলিবল যেন এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে! এই খেলাটা আপনাকে শুধু দৌড়াদৌড়ি করায় না, বরং শরীরের প্রতিটি পেশীকে সক্রিয় করে তোলে। আমার তো মনে হয়, ভলিবল একাধারে মজা এবং ব্যায়ামের দারুণ এক প্যাকেজ। একবার ভেবে দেখুন, যখন আপনি মাঠে ভলিবল খেলছেন, তখন একই সাথে লাফানো, ঝাঁপানো, হাত নাড়ানো, দৌড়ানো—সবকিছুই একসঙ্গে হচ্ছে। এর ফলে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং ফুসফুসও শক্তিশালী হয়। এছাড়া, ভলিবল খেলে আমি নিজেও দেখেছি যে, এর মাধ্যমে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। খেলার সময় যখন আমরা কোনো বিষয়ে গভীরভাবে মনোযোগ দিই, তখন দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তাগুলো অনেকটাই দূরে চলে যায়। এই খেলাটি আমাদের মেজাজকে ফুরফুরে করে তোলে এবং এক ধরনের স্বস্তি এনে দেয়।
পুরো শরীরের ওয়ার্কআউট এবং ক্যালরি খরচ
ভলিবলকে প্রায়ই ‘পুরো শরীরের ওয়ার্কআউট’ বলা হয়, এবং এই কথাটি একেবারেই সত্যি। যখন আপনি ভলিবল খেলছেন, তখন আপনার শরীরের উপরের অংশ (হাত, কাঁধ), মাঝের অংশ (পেট, কোমর) এবং নিচের অংশ (পা) – সবই সক্রিয় থাকে। বিশেষ করে স্পাইক করা বা ব্লক করার সময় হাতের এবং কাঁধের পেশীগুলো দারুণ কাজ করে। সার্ভিস করার সময় পুরো শরীরের সমন্বয় প্রয়োজন হয়, যা আপনার কোর মাসলগুলোকে শক্তিশালী করে। আর বলের পেছনে দৌড়ানো বা লাফিয়ে ওঠার সময় পায়ের পেশীগুলোর ব্যাপক ব্যায়াম হয়। আমি দেখেছি, এক ঘণ্টা ভলিবল খেললে আপনি প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি পর্যন্ত খরচ করতে পারেন, যা অন্যান্য অনেক ব্যায়ামের চেয়েও বেশি কার্যকর। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, নিয়মিত ভলিবল খেলার ফলে আমার শরীরের শক্তি এবং সহনশীলতা দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা ওজন কমাতে চান বা একটি সুঠাম দেহ পেতে চান, তাদের জন্য ভলিবল একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি খেলার আনন্দ দেয় না, বরং আপনার শরীরের মেটাবলিজমকেও ত্বরান্বিত করে।
হাড় ও পেশীর জোর বাড়ানোর এক দারুণ উপায়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ও পেশীর দুর্বলতা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু নিয়মিত ভলিবল খেলার মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন। ভলিবলে লাফানো, দৌড়ানো এবং বারবার দিক পরিবর্তন করার মতো গতিবিধিগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে হাড় শক্তিশালী হয় এবং অস্টিওপরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া, এই খেলাটি পেশী গঠনেও অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে হাতের পেশী, পায়ের পেশী এবং কোর মাসলগুলো ভলিবল খেলার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়। একবার ভেবে দেখুন, প্রতিটি স্পাইক বা ব্লকে আপনার পেশীগুলোর উপর কতটা চাপ পড়ে! এই চাপই পেশীগুলোকে আরও মজবুত করে তোলে। আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি কিভাবে নিয়মিত ভলিবল খেলে দুর্বল শরীরের মানুষও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমার এক বন্ধু ছিল, যার পেশী খুব দুর্বল ছিল, কিন্তু ভলিবল খেলতে শুরু করার পর থেকে তার পেশীগুলো অনেক শক্তিশালী হয়েছে এবং সে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ভলিবল শুধুমাত্র আপনার শারীরিক শক্তিই বাড়ায় না, বরং এটি আপনাকে আরও সক্রিয় এবং উদ্যমী করে তোলে।
শুধু খেলা নয়, এটা একটা সম্পর্ক: দলগত খেলার গুরুত্ব
ভলিবলকে অনেকে শুধু একটি খেলা হিসেবে দেখে থাকেন, কিন্তু আমার চোখে এটি একটি গভীর সম্পর্কের বন্ধন। এটি এমন একটি খেলা যেখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পাশাপাশি দলগত সমন্বয়ই আসল। যখন মাঠের প্রতিটি খেলোয়াড় একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে খেলে, তখন তা দেখতে এক অসাধারণ দৃশ্য মনে হয়। এই খেলাটি আমাদের শেখায় কিভাবে অন্যের প্রতি আস্থা রাখতে হয়, কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হয় এবং কিভাবে একে অপরের শক্তি ও দুর্বলতাকে বুঝতে হয়। মনে পড়ে, আমাদের কলেজের ভলিবল টিমে একবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। আমরা সবাই খুব নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু খেলার আগে আমাদের কোচ বলেছিলেন, “মাঠে তোমরা ১১ জন নও, তোমরা একটা পরিবার।” সেই কথাগুলো আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। আমরা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রেখে খেলেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত জিতেছিলাম। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছিলাম যে, ভলিবল শুধু শট মারা বা পাস দেওয়া নয়, এটা একে অপরের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসার খেলা।
দলগত কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
ভলিবল খেলার প্রতিটি মুহূর্তে দলগত কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি বল কোর্টে পড়ার আগেই খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় কে বলটি ধরবে, কিভাবে পাস দেবে এবং কে স্পাইক করবে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সমন্বিত হতে হয়। এখানে মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত পুরো দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণেই ভলিবল খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা গড়ে ওঠে। আমার মনে আছে, একবার একটি ম্যাচে আমাদের দলের একজন খেলোয়াড় আহত হয়েছিলেন। তখন বাকি খেলোয়াড়রা দ্রুত নিজেদের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করে খেলা চালিয়ে গিয়েছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেরই নিজেদের ভূমিকার বাইরেও চিন্তা করতে হয় এবং দলের স্বার্থে কাজ করতে হয়। ভলিবল খেলার এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও খুব কাজে লাগে। কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো সামাজিক পরিবেশে যখন আমরা দলগতভাবে কাজ করি, তখন ভলিবলের এই শিক্ষাগুলো আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং সফল হতে সাহায্য করে।
সামাজিক বন্ধন ও নতুন বন্ধু তৈরি
ভলিবল খেলার আরেকটি দারুণ দিক হলো এটি সামাজিক বন্ধন তৈরি করে এবং নতুন বন্ধুত্বের সুযোগ করে দেয়। যখন আপনি নিয়মিত একটি দলের সাথে খেলছেন, তখন আপনারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন, একে অপরের সাথে হাসাহাসি করেন এবং জয়ের আনন্দ ভাগ করে নেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো খেলোয়াড়দের মধ্যে এক অনন্য বন্ধন তৈরি করে। আমার নিজের জীবনে অনেক বন্ধু আছে যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ভলিবল খেলার মাধ্যমে। আমরা শুধু মাঠেই খেলাধুলা করি না, বরং মাঠের বাইরেও আমাদের মধ্যে এক দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। একসঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া, খেলার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া – এই সবকিছুই ভলিবলের সৌজন্যে। এছাড়া, বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে, যেখানে অন্য দলের খেলোয়াড়দের সাথেও পরিচিতি হয় এবং নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভলিবল যেন একটা সেতু, যা মানুষকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে এবং এক বিশাল কমিউনিটি তৈরি করে।
যেকোনো বয়সের জন্য উপযুক্ত: ভলিবলের সার্বজনীন আবেদন
ভলিবল খেলার সবচেয়ে সুন্দর দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো এর সার্বজনীন আবেদন। আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, ভলিবল খেলতে পারেন। এই খেলাটি ছোটদের জন্য যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি বড়দের জন্যও এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার এক দারুণ মাধ্যম। আমার নিজের ছোট ভাইবোনদের দেখেছি কিভাবে তারা ভলিবল খেলে দারুণ মজা পায়, আবার আমার অনেক বয়স্ক আত্মীয়ও আছেন যারা তাদের শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য ভলিবল খেলেন। এর কারণ হলো ভলিবল খেলার ধরন। এটি এমন একটি খেলা যেখানে আপনি নিজের শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারেন। যদি আপনি খুব বেশি দৌড়াতে না পারেন, তবে আপনি নেট থেকে কম দূরত্বে থেকে খেলতে পারেন। আবার যদি আপনি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করেন, তবে দ্রুতগতির ম্যাচে অংশ নিতে পারেন। এর ফলে যেকোনো বয়সের মানুষ নিজের পছন্দ অনুযায়ী এই খেলায় অংশ নিতে পারে এবং এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
শিশু থেকে বয়স্ক, সবার জন্য খেলার আনন্দ
শিশুদের জন্য ভলিবল খেলার আনন্দ অন্যরকম। এটি তাদের শারীরিক বিকাশ, চোখের সমন্বয় এবং দলগত কাজ করার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমি দেখেছি, শিশুরা যখন ভলিবল খেলে, তখন তারা নিজেদের মধ্যে এক দারুণ প্রতিযোগিতা অনুভব করে এবং এটি তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলীও তৈরি করে। অন্যদিকে, বয়স্কদের জন্য ভলিবল একটি চমৎকার ব্যায়াম। এটি তাদের শরীরকে সচল রাখে, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং মানসিক সতেজতা বজায় রাখে। আমার এলাকার একটি সিনিয়র সিটিজেন গ্রুপ আছে যারা নিয়মিত ভলিবল খেলে। তারা বলে যে, এই খেলাটি তাদের মনকে সতেজ রাখে এবং প্রতিদিনের রুটিন থেকে একঘেয়েমি দূর করে। ভলিবল যেন একটি পরিবারকে একসঙ্গে নিয়ে আসার এক মাধ্যম। পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ভলিবল খেলতে পারে, যা তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে তোলে এবং এক সুন্দর স্মৃতি তৈরি করে। এই খেলাটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এক আনন্দময় বন্ধন তৈরি করতে পারে।
ইনডোর-আউটডোর উভয় ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তা
ভলিবলের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এটি ইনডোর এবং আউটডোর উভয় পরিবেশেই খেলা যায়। আবহাওয়া খারাপ হলেও ইনডোর কোর্টে ভলিবল খেলা যায়, যা এটিকে সারা বছর খেলার উপযোগী করে তোলে। আবার রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সৈকতে বা খোলা মাঠে ভলিবল খেলার মজাই আলাদা! বিশেষ করে বিচ ভলিবল এখন বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বালির উপর খেলা বলে এটি শরীরের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয় এবং ক্যালরি খরচও বেশি হয়। আমার মনে পড়ে, একবার বন্ধুদের সাথে আমরা সমুদ্র সৈকতে বিচ ভলিবল খেলতে গিয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাটা ছিল অসাধারণ! সূর্যের আলো, সমুদ্রের হাওয়া আর বালির উপর খেলা – সব মিলিয়ে এক দারুণ অনুভূতি। এছাড়া, জিমে বা স্কুলের ইনডোর কোর্টেও ভলিবল খেলা যায়, যা এটিকে আরও সহজলভ্য করে তোলে। এই নমনীয়তার কারণে ভলিবল সব ধরনের মানুষ এবং সব ধরনের পরিস্থিতিতে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভলিবল সরঞ্জাম: শুরু করার জন্য কী কী দরকার?
ভলিবল খেলা শুরু করার জন্য খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন হয় না, যা এটিকে অন্যান্য অনেক খেলার চেয়ে বেশি সহজলভ্য করে তুলেছে। আমি নিজেও যখন প্রথম শুরু করেছিলাম, তখন একটি ভালো ভলিবল আর একজোড়া জুতো নিয়েই মাঠে নেমে পড়েছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস যোগ করেছি। তবে, একদম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো জানলে আপনার জন্য সুবিধা হবে। এতে করে আপনি অযথা ব্যয় করা থেকে বাঁচবেন এবং একটি ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলা শুরু করতে পারবেন। সবকিছুর আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো খেলার প্রতি আপনার আগ্রহ এবং উদ্যম! একবার যদি এই আগ্রহটা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বাকি সবকিছুই আপনার কাছে সহজ মনে হবে। মনে রাখবেন, দামী সরঞ্জাম না হলেও চলবে, তবে সঠিক এবং মানসম্মত সরঞ্জাম আপনার খেলার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং ইনজুরির ঝুঁকিও কমাবে।
একটি ভালো ভলিবল এবং সঠিক জুতো

ভলিবল খেলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো একটি ভালো মানের ভলিবল। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভলিবল পাওয়া যায়, তবে শুরু করার জন্য একটি সফট এবং হালকা ভলিবল বেছে নেওয়া ভালো। এটি আপনার হাতকে আঘাত থেকে রক্ষা করবে এবং বল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য ব্যবহৃত ভলিবলগুলো কিছুটা ভারী এবং শক্ত হয়, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে সেগুলোর প্রয়োজন নেই। আমার ব্যক্তিগত পছন্দের মধ্যে রয়েছে মিকাসা বা মোল্টেন-এর ভলিবল, কারণ এগুলো টেকসই এবং খেলতে আরামদায়ক। এছাড়া, ভলিবল খেলার জন্য সঠিক জুতো নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। ভলিবলে যেহেতু অনেক লাফাতে হয় এবং দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে হয়, তাই ভালো গ্রিপ এবং কুশনিংযুক্ত জুতো পরা উচিত। এটি আপনার পা এবং হাঁটুকে আঘাত থেকে রক্ষা করবে। আমি নিজেই একবার ভুল জুতো পরে খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলাম, তাই এই বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা উচিত।
পোশাক ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক
ভলিবল খেলার জন্য আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত। এমন পোশাক বেছে নিন যা আপনার চলাচলে বাধা দেবে না এবং ঘাম শোষণ করতে সক্ষম। সাধারণত, হালকা ওজনের টি-শার্ট এবং শর্টস বা ট্র্যাক প্যান্ট ভলিবল খেলার জন্য উপযুক্ত। মেয়েদের জন্য স্পোর্টস ব্রা আবশ্যক। এছাড়া, কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে: নি-প্যাড (হাঁটু বাঁচানোর জন্য), এলবো-প্যাড (কনুই বাঁচানোর জন্য), এবং একটি জলের বোতল। নি-প্যাড এবং এলবো-প্যাড বিশেষ করে নতুন খেলোয়াড়দের জন্য খুবই উপকারী, কারণ তারা অনেক সময় অসাবধানতাবশত পড়ে যেতে পারে বা ডাইভ দিতে গিয়ে আঘাত পেতে পারে। আমার কাছে একটি ছোট তোয়ালেও খুব দরকারি মনে হয়, কারণ খেলার সময় প্রচুর ঘাম হয়। এই ছোট ছোট জিনিসগুলো আপনার খেলাকে আরও নিরাপদ এবং আরামদায়ক করে তুলবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে: ভলিবল আমাকে যা শিখিয়েছে
ভলিবল আমার কাছে শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমার জীবনের একটি অংশ। এই খেলাটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, যা আমি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজে লাগিয়েছি। যখন প্রথম ভলিবল খেলা শুরু করেছিলাম, তখন আমার আত্মবিশ্বাস খুব কম ছিল। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এবং দলের বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। ভলিবল আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে জিততে হয় এবং কিভাবে হার মেনে নিতে হয়। জয়ের আনন্দ যেমন অপরিসীম, তেমনি হার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও খুব জরুরি। একবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমরা হেরে গিয়েছিলাম, তখন আমরা সবাই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোচ বলেছিলেন, “হার হলো শেখার প্রথম ধাপ।” সেই কথাগুলো আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। পরের বার আমরা আরও বেশি পরিশ্রম করে খেলেছিলাম এবং জিতেছিলাম। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।
মাঠের ভেতরের চ্যালেঞ্জ এবং বাইরের জীবন
ভলিবল মাঠের ভেতরে যেমন চ্যালেঞ্জ থাকে, তেমনি বাইরের জীবনেও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। ভলিবল আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হয়। যখন মাঠে একটি কঠিন প্রতিপক্ষ থাকে, তখন আমাদের দলগতভাবে কাজ করতে হয় এবং একটি কৌশল তৈরি করতে হয়। একই ভাবে, জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের ধৈর্য ধরতে হয়, সঠিক পরিকল্পনা করতে হয় এবং অন্যদের সাথে সহযোগিতা করতে হয়। আমার মনে আছে, একবার একটি বল আমার হাত থেকে ফসকে গিয়েছিল এবং আমরা পয়েন্ট হারিয়েছিলাম। তখন আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম, কিন্তু দলের একজন সদস্য আমাকে উৎসাহিত করে বলেছিল, “পরের বলের জন্য প্রস্তুত হও।” এই কথাটি আমাকে শিখিয়েছে যে, অতীতকে নিয়ে বেশি চিন্তা না করে বর্তমানের উপর মনোযোগ দিতে হয়। ভলিবল খেলার এই শিক্ষাগুলো আমাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে এবং আমাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
জিত-হারের ঊর্ধ্বে এক অসাধারণ অনুভূতি
ভলিবল খেলার সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হলো জিত-হারের ঊর্ধ্বে যে আনন্দ থাকে, সেটা। হ্যাঁ, জেতাটা অবশ্যই আনন্দের, কিন্তু খেলার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করাটাই আসল। যখন আপনি বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করে খেলছেন, একটি দারুণ সেভ দিচ্ছেন বা একটি শক্তিশালী স্পাইক করছেন, তখন সেই অনুভূতিটা অসাধারণ। এই আনন্দটা কোনো জয় বা পরাজয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটা খেলার প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং দলের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভরশীল। আমি আমার জীবনে অনেক ভলিবল ম্যাচ খেলেছি, কিছুতে জিতেছি, কিছুতে হেরেছি। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচের স্মৃতিই আমার কাছে অমূল্য। কারণ এই খেলাটা আমাকে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং আমাকে একজন সুখী মানুষ হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করেছে। ভলিবল আমার কাছে শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, এটি একটি আবেগ, একটি জীবনদর্শন।
ভলিবলকে পেশা হিসেবে গড়া: সম্ভাবনা ও সুযোগ
আমরা অনেকেই ভলিবলকে শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখি, কিন্তু সত্যি বলতে কি, ভলিবলকে একটি সফল পেশা হিসেবে গড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ক্রীড়া শিল্পের ব্যাপক প্রসারের ফলে ভলিবল খেলোয়াড়, কোচ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যারা ভলিবলকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং দারুণ সফল হয়েছেন। তারা শুধু নিজেদের প্যাশনকে অনুসরণ করেননি, বরং এর মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ক্যারিয়ারও গড়ে তুলেছেন। এই পেশাটি আপনাকে শুধু আর্থিক নিরাপত্তাই দেবে না, বরং আপনাকে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভের সুযোগও করে দেবে। যারা ভলিবলকে গভীরভাবে ভালোবাসেন এবং এটিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে।
কোচিং ও প্রশিক্ষণ: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য
ভলিবল খেলার অন্যতম প্রধান পেশাদার সুযোগ হলো কোচিং এবং প্রশিক্ষণ। যারা খেলাধুলার কৌশল এবং জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পথ। একজন দক্ষ কোচ নতুন খেলোয়াড়দের তৈরি করতে, তাদের কৌশল শেখাতে এবং তাদের মধ্যে দলগত মানসিকতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আমি দেখেছি, অনেক প্রাক্তন খেলোয়াড়ই সফল কোচ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করছেন। এছাড়া, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং ক্লাবে ভলিবল প্রশিক্ষকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। যদি আপনার খেলার প্রতি গভীর জ্ঞান থাকে এবং আপনি অন্যদের শেখাতে ভালোবাসেন, তবে কোচিং আপনার জন্য একটি দারুণ ক্যারিয়ার হতে পারে। এটি আপনাকে শুধু আর্থিক স্বাবলম্বীই করবে না, বরং আপনার মাধ্যমে অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের স্বপ্ন পূরণেও আপনি অংশীদার হতে পারবেন।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট ও ইভেন্ট অর্গানাইজেশন
ভলিবলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিশ্ব। যারা সরাসরি মাঠে খেলতে পছন্দ করেন না, কিন্তু খেলাধুলার প্রতি তাদের প্যাশন রয়েছে, তারা এই ক্ষেত্রে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, খেলোয়াড়দের ম্যানেজমেন্ট, স্পন্সরশিপ ডিল করা এবং খেলার প্রচার-প্রচারণার মতো কাজগুলো এই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। আমার এক বন্ধু আছে যে একটি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে কাজ করে এবং তারা নিয়মিত ভলিবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। সে আমাকে বলেছিল যে, এই কাজগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু একই সাথে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। এই পেশা আপনাকে শুধু একটি ভালো আয়ই দেবে না, বরং আপনাকে ক্রীড়া জগতের বিভিন্ন মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং করার সুযোগও করে দেবে। এছাড়া, স্পোর্টস মার্কেটিং এবং মিডিয়ার ক্ষেত্রেও ভলিবলের সাথে সম্পর্কিত অনেক সুযোগ রয়েছে।
| ভলিবল খেলার সুবিধা | শারীরিক দিক | মানসিক ও সামাজিক দিক |
|---|---|---|
| শারীরিক সুস্থতা | হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্যালরি খরচ, হাড়ের জোর বাড়ানো | স্ট্রেস কমানো, মেজাজ ফুরফুরে রাখা |
| পেশী গঠন ও শক্তি | হাত, পা, কোরের পেশী শক্তিশালী করা, সহনশীলতা বৃদ্ধি | আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, লক্ষ্যের প্রতি মনোনিবেশ |
| দলগত দক্ষতা | দলগত কাজ, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহযোগিতা | সামাজিক বন্ধন, নতুন বন্ধু তৈরি, নেতৃত্বগুণ |
| সব বয়সের জন্য | শিশুদের শারীরিক বিকাশ, বয়স্কদের সচল রাখা | পারিবারিক বিনোদন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সংযোগ |
글을মাচি며
সত্যি বলতে কি, ভলিবল নিয়ে আমার এই দীর্ঘ পথচলাটা ছিল অসাধারণ। এই খেলাটা শুধু আমাকে শারীরিক সুস্থতাই দেয়নি, বরং জীবনের অনেক কঠিন সময়েও পাশে থেকেছে। এর মাধ্যমে আমি শিখেছি কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হয়, কিভাবে হার মেনে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করতে হয়। আমার মনে হয়, ভলিবল আমাদের জীবনে এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে, যা দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। আমি মন থেকে চাই, আরও বেশি মানুষ এই খেলাটির সাথে যুক্ত হোক এবং এর অফুরন্ত আনন্দ উপভোগ করুক।
এই খেলার প্রতিটি স্পাইক, প্রতিটি ডিফেন্স যেন জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে যেতে হয় এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়। যদি আপনি এখনও ভলিবল খেলার সুযোগ না পেয়ে থাকেন, তবে আর দেরি না করে আজই শুরু করে দিন। বিশ্বাস করুন, এটি আপনাকে হতাশ করবে না! আপনার শরীর, মন এবং আত্মা – সবকিছুর জন্যই এটি এক দারুণ উপহার। ভলিবল আপনার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে সাহায্য করবে, আমি নিশ্চিত।
আলব্দো নুন সীল কিতাব
১. ভলিবল একটি সম্পূর্ণ শারীরিক ব্যায়াম, যা আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং ক্যালরি খরচ করতে সাহায্য করে।
২. এটি দলগতভাবে খেলার কারণে সামাজিক বন্ধন তৈরি হয় এবং নতুন বন্ধুত্বের সুযোগ করে দেয়।
৩. ভলিবল যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত এবং এটি ইনডোর ও আউটডোর উভয় পরিবেশেই খেলা যায়।
৪. এই খেলা শুরু করার জন্য খুব বেশি দামী সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজন হয় না, যা এটিকে সহজলভ্য করে তোলে।
৫. মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে সতেজ রাখতে ভলিবল একটি কার্যকর উপায়, যা আপনাকে আরও উদ্যমী করে তোলে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি
ভলিবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি সুস্থ জীবনযাপনের এক দারুণ উপায়। এর মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক শান্তি এবং সামাজিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য এটি যেমন এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা, তেমনি এর কম খরচে শুরু করার সুযোগও একে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। দলগত কাজ, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নতুন সম্পর্ক তৈরির জন্য ভলিবল এক অসাধারণ মাধ্যম। তাই, আপনার জীবনকে আরও সক্রিয় ও আনন্দময় করে তুলতে ভলিবলের জুড়ি মেলা ভার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: আজকাল ভলিবল খেলা কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে?
উ: আমার নিজের চোখে দেখা, আজকাল ভলিবলের জনপ্রিয়তা যেন আকাশ ছুঁয়েছে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, ভলিবল একটা দলগত খেলা, যেখানে একে অপরের সাথে মিলেমিশে খেলার এক দারুণ সুযোগ পাওয়া যায়। এতে শুধু শরীরচর্চাই হয় না, বরং বন্ধুত্বের বন্ধনও খুব মজবুত হয়। যখন একসাথে সবাই মিলে একটা পয়েন্ট জেতার জন্য চেষ্টা করে, সেই অনুভূতিটা অসাধারণ!
দ্বিতীয়ত, এই খেলাটা খেলার জন্য খুব বেশি সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না; একটা নেট আর একটা বল হলেই কাজ চলে যায়, যা একে অনেক বেশি সহজলভ্য করে তুলেছে। আমার মনে আছে, আমরা যখন ছোটবেলায় খেলতাম, তখন একটা নাইলনের দড়ি দিয়েই নেট বানিয়ে নিতাম!
তৃতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অনেক ভলিবল টুর্নামেন্ট বা মজার ভলিবল ভিডিও আজকাল খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ছে, যা তরুণ প্রজন্মকে এই খেলার প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলছে। সর্বোপরি, এই খেলাটা সব বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত, যা এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর অন্যতম চাবিকাঠি বলে আমার মনে হয়।
প্র: ভলিবল খেলার প্রধান স্বাস্থ্যগত এবং মানসিক সুবিধাগুলো কী কী?
উ: সত্যি বলতে কি, ভলিবল খেলার স্বাস্থ্যগত ও মানসিক উপকারিতা বলে শেষ করা কঠিন। শারীরিকভাবে, এটা একটা দুর্দান্ত কার্ডিও ওয়ার্কআউট। যখন আমরা বলের পেছনে দৌড়াই, লাফাই বা ডাইভ দিই, তখন আমাদের পুরো শরীরের পেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমার তো মনে হয়, এতে যেমন হাতের জোর বাড়ে, তেমনি পায়ের পেশিও শক্তিশালী হয়। এছাড়াও, এটা আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং সমন্বয় ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটা বল কখন কোথায় আসবে, সেটা অনুমান করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোটা সত্যিই একটা চ্যালেঞ্জ। মানসিকভাবে বলতে গেলে, ভলিবল খেলা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। খেলার মাঠে যখন আমরা নিজেদের পুরোপুরি ঢেলে দিই, তখন জীবনের সব চিন্তা দূরে চলে যায়। দলের সাথে মিলেমিশে কাজ করার ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং জয় পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ভলিবল আমাকে অনেক বেশি ফোকাসড এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
প্র: একজন নতুন খেলোয়াড় হিসেবে ভলিবল খেলা শুরু করতে হলে কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
উ: যারা ভলিবল খেলা শুরু করার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ আছে। প্রথমত, একদম মৌলিক বিষয়গুলো দিয়ে শুরু করা উচিত। যেমন, বল কীভাবে ঠিকমতো পাস করতে হয়, সার্ভ কীভাবে করতে হয় বা সেট কীভাবে দিতে হয় – এই ব্যাপারগুলো আগে রপ্ত করে নেওয়া খুব জরুরি। ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল ভিডিও পাওয়া যায়, সেগুলো দেখতে পারেন। অথবা, আমার মনে হয়, কোনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে সরাসরি শেখাটা সবচেয়ে ভালো। দ্বিতীয়ত, সঠিক পোশাক এবং জুতা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন জুতা পরা উচিত যা আপনাকে ভালো গ্রিপ দেবে এবং দৌড়াতে সাহায্য করবে। তৃতীয়ত, শুরুর দিকে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। প্রথম দিনেই হয়তো সবকিছু নিখুঁত হবে না, কিন্তু লেগে থাকলে উন্নতি হবেই। আমি নিজেও যখন প্রথম শুরু করেছিলাম, তখন বল কোথায় যাচ্ছে নিজেই বুঝতাম না!
আর সবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খেলাটা উপভোগ করা। যখন আপনি খেলাটাকে আনন্দ নিয়ে খেলবেন, তখন শেখার প্রক্রিয়াটাও অনেক বেশি সহজ এবং মজাদার হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, ভলিবল মানেই শুধু জেতা নয়, বরং উপভোগ করা এবং নতুন কিছু শেখা।






