খেলাধুলা মানেই এক অন্যরকম উত্তেজনা, তাই না? আর ভলিবল তো সেই খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে প্রতিটা মুহূর্তে টেনশন আর থ্রিল থাকে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, অনেক সময় আমরা খেলার মূল নিয়মগুলো ভালো করে না জানার কারণে খেলার পুরো মজাটাই নষ্ট করে ফেলি। আমি নিজে যখন প্রথম ভলিবল খেলা শুরু করি, তখন ভেবেছিলাম শুধু বল পার করলেই বুঝি হয়ে গেল!
কিন্তু পরে যখন খেলার খুঁটিনাটিগুলো শিখলাম, তখন বুঝলাম এর মধ্যে কত গভীরতা আছে, কত দারুণ সব কৌশল লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে, খেলার প্রবাহ বা ম্যাচ পরিচালনার সঠিক পদ্ধতি জানলে একজন খেলোয়াড় হিসেবে যেমন সুবিধা হয়, তেমনি একজন দর্শক হিসেবেও খেলার প্রতি আগ্রহটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আজকাল তো ভলিবল শুধু মাঠে নয়, অনলাইনেও দারুণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তাই খেলার সঠিক নিয়মকানুন জানাটা আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। আপনারা যদি আমার মতো ভলিবলের ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের এই লেখাটা আপনাদের জন্যই। চলুন, খেলার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক!
ভলিবল খেলার শুরুটা কেমন হয়: পরিবেশ ও খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি

পিচের পরিবেশ ও সঠিক প্রস্তুতি
ভলিবল খেলার জন্য প্রথমেই দরকার একটা চমৎকার কোর্ট। ভাবুন তো, যদি খেলার মাঠটাই ভালো না হয়, তাহলে কি আর খেলার আসল মজা পাওয়া যায়? আমার নিজের বহুবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যেখানে পিচ বা কোর্ট ভালো না থাকায় খেলতে গিয়ে বেশ অসুবিধা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোর্টকে ১৮ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার চওড়া হতে হয়, মাঝখানে নেটের উচ্চতা পুরুষদের জন্য ২.৪৩ মিটার এবং মহিলাদের জন্য ২.২৪ মিটার। এই পরিমাপগুলো শুধু সংখ্যা নয়, এগুলো খেলার গতি আর কৌশল নির্ধারণে বিশাল ভূমিকা রাখে। যখন প্রথমবার এত উঁচু নেট দেখেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম কীভাবে এর উপর দিয়ে বল পার করব!
কিন্তু অনুশীলনের পর বুঝলাম, সঠিক টেকনিক জানলে এটা মোটেও কঠিন কিছু নয়। খেলোয়াড়দের জন্য খেলার আগে ওয়ার্ম-আপ করাটা ভীষণ জরুরি। হালকা স্ট্রেচিং, দৌড়াদৌড়ি, আর বল নিয়ে কিছু প্র্যাকটিস না করলে পেশিতে টান পড়তে পারে। একবার এক টুর্নামেন্টে আমার এক বন্ধু ওয়ার্ম-আপ না করেই খেলতে নেমেছিল, আর ফলস্বরূপ খেলার মাঝখানেই পেশিতে চোট পেয়েছিল। এমন ভুল যেন আমরা না করি, কারণ সুস্থ শরীর নিয়ে খেললে পারফরম্যান্স অনেক ভালো হয় এবং খেলার আনন্দটাও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
দলের ভূমিকা ও প্রাথমিক বিন্যাস
একটা ভলিবল দলে সাধারণত ৬ জন খেলোয়াড় মাঠে থাকে, তবে দলের মোট সদস্য সংখ্যা বেশিও হতে পারে। খেলার শুরুতেই কোন খেলোয়াড় কোন পজিশনে থাকবে, সেটা ঠিক করা খুব জরুরি। এটা অনেকটা রণনীতির মতো। কে সার্ভিস দেবে, কে বল রিসিভ করবে, কে ব্লকের জন্য প্রস্তুত থাকবে – এই সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হয়। আমার মনে আছে, প্রথমদিকে আমরা পজিশন নিয়ে খুব গোলমাল করতাম, যার ফলে অনেক সহজ পয়েন্ট হাতছাড়া হয়ে যেত। পরে যখন আমাদের কোচ বোঝালেন, রোটেশন আর পজিশনের গুরুত্ব কতখানি, তখন থেকে আমরা অনেক বেশি সংগঠিতভাবে খেলতে শুরু করলাম। খেলা শুরুর আগে টস হয়, যার মাধ্যমে ঠিক করা হয় কোন দল প্রথমে সার্ভিস করবে বা কোন দিকে খেলবে। এই টসটাও কিন্তু বেশ মজার একটা অংশ, কারণ টস জিতে প্রথমে সার্ভিস করার সুযোগ পেলে একটা মানসিক সুবিধা পাওয়া যায়। দলনেতার ভূমিকা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাকে শুধু খেলোয়াড়দের পরিচালনা করলেই হয় না, বরং প্রতিপক্ষ দলের কৌশলগুলোও বুঝতে চেষ্টা করতে হয়।
সার্ভিস থেকে পয়েন্ট: খেলার মূল চালিকাশক্তি
সঠিক সার্ভিসের গুরুত্ব
ভলিবল খেলায় সার্ভিস হলো প্রথম পদক্ষেপ, যা দিয়ে খেলার শুরু হয় এবং প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার প্রথম সুযোগ তৈরি হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটা শক্তিশালী এবং সঠিক সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে নড়বড়ে করে দেওয়া যায়, এমনকি সরাসরি পয়েন্টও পাওয়া সম্ভব। সার্ভিস কত রকমের হতে পারে জানেন?
আন্ডারহ্যান্ড সার্ভিস, ওভারহ্যান্ড সার্ভিস, ফ্লোটিং সার্ভিস, টপস্পিন সার্ভিস – একেকটার একেকরকম জাদু। প্রথম যখন ফ্লোটিং সার্ভিস শেখার চেষ্টা করছিলাম, তখন বল ঠিকমতো উড়ে না গিয়ে সোজাসুজি নেটে আটকা পড়ত। অনেক অনুশীলনের পর বুঝেছিলাম, বলকে ঠিক কোথায় আঘাত করলে এবং কীভাবে হাতের নড়াচড়া করলে বলটা ভাসমান অবস্থায় যাবে। সার্ভিস লাইন অতিক্রম করার আগে সার্ভ করা, বলকে একবার ছুঁড়ে মারার পর দ্বিতীয়বার না ধরা, বা ভুলক্রমে নেটের বাইরে চলে যাওয়া – এসব ছোট ছোট ভুলের কারণে প্রতিপক্ষকে সহজেই পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হয়। তাই, সার্ভিসের সময় মনোযোগ এবং নির্ভুলতা ভীষণ জরুরি। একটা ভালো সার্ভিস শুধু পয়েন্ট জেতাতে সাহায্য করে না, পুরো দলের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তোলে।
পয়েন্ট অর্জনের পথ এবং ডিউস
ভলিবল খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো পয়েন্ট অর্জন করা। প্রতিপক্ষ যখন বল নিজেদের কোর্টের বাইরে ফেলে দেয়, নেটে লাগিয়ে দেয়, বা অবৈধভাবে বল ছুঁয়ে ফেলে – তখন সার্ভিস দেওয়া দল পয়েন্ট পায়। কিন্তু যদি সার্ভিসকারী দলই ভুল করে, তবে প্রতিপক্ষ দল পয়েন্ট পায় এবং সার্ভিসের অধিকারও তাদের কাছে চলে যায়। এই নিয়মটা খুব সহজ মনে হলেও খেলার সময় এর গুরুত্ব বোঝা যায়। সাধারণত, ২৫ পয়েন্ট অর্জন করলে একটি সেট জেতা যায়, তবে সেটের শেষে দুই দলের পয়েন্ট ২৪-২৪ হয়ে গেলে খেলা “ডিউস” হয়ে যায়। ডিউসের নিয়মটা ভলিবলকে আরও বেশি রোমাঞ্চকর করে তোলে। তখন এক দলকে টানা ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে হয় সেট জেতার জন্য। আমার নিজের অনেকবার ডিউস হওয়া ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতা আছে, যেখানে প্রতিটা পয়েন্টের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা থাকে। মনে হচ্ছিল যেন হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে!
এমন সময় ঠাণ্ডা মাথায় খেলাটা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন, কিন্তু যারা পারে তারাই শেষ হাসি হাসে। এই ডিউসের কারণে অনেক সময় খেলা এতটাই দীর্ঘ হয় যে মনে হয় যেন শেষই হবে না।
বল রিসিভ ও পাসিংয়ের দারুণ কৌশল
প্রথম স্পর্শের গুরুত্ব
ভলিবলে প্রথম স্পর্শটা আসলে খেলার মূল ভিত্তি। সার্ভিসের পর বলটা যখন আপনার কোর্টে আসে, তখন সেটাকে নিখুঁতভাবে রিসিভ করাটা খুবই জরুরি। ভাবুন তো, যদি প্রথম টাচটাই ভুল হয়, তাহলে কি আর পরের অ্যাটাকটা ঠিকমতো করা সম্ভব?
আমার প্রথম দিকে বল রিসিভ করতে ভীষণ সমস্যা হতো। বল ঠিকমতো হাতে আসতো না, কখনও জোরালো সার্ভিসে হাত ব্যথা হয়ে যেত। কিন্তু পরে যখন কোচ অ্যাঞ্জেলো ব্যাখ্যা করলেন যে, বাহুগুলোকে একদম সোজা রেখে বলকে রিসিভ করতে হয়, আর শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়, তখন থেকে আমার খেলার অনেক উন্নতি হলো। রিসিভের মূল লক্ষ্য থাকে বলকে সেটারের কাছে এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যাতে সে খুব সহজে একটা ভালো অ্যাটাকের জন্য বল সেট করতে পারে। এটাকে আমরা “ফোরআর্ম পাস” বা “বাডি পাস” বলে থাকি। রিসিভারের পজিশন, তার চোখ বলের গতিবিধি অনুসরণ করা, এবং সঠিক সময়ে শরীরের ওজন পরিবর্তন করা – এই সবকিছুই একটা নিখুঁত রিসিভের জন্য অপরিহার্য। একটা ভালো রিসিভ পুরো দলকে আত্মবিশ্বাস যোগায় এবং খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
সেটিংয়ের শিল্প: অ্যাটাক তৈরির চাবিকাঠি
রিসিভের পর বল যখন সেটারের কাছে আসে, তখন তার কাজ হলো অ্যাটাকারের জন্য বলটাকে নিখুঁতভাবে প্রস্তুত করা। এটাকে “সেটিং” বলে। একজন দক্ষ সেটার হলো দলের মস্তিষ্ক। সেটারকে এক মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, কোন অ্যাটাকারের জন্য বল সেট করবে এবং কেমন উচ্চতায় করবে, যাতে অ্যাটাকার সহজে বলটা ব্লকারের পাশ দিয়ে বা উপর দিয়ে পাঠিয়ে পয়েন্ট অর্জন করতে পারে। আমি নিজে সেটিং করার চেষ্টা করে বুঝেছি, এটা কতটা কঠিন কাজ। বলকে ঠিকমতো হাতে রাখা, কব্জির সঠিক ব্যবহার, এবং বলের গতি নিয়ন্ত্রণ করা – এসবের জন্য প্রচুর অনুশীলন লাগে। একটা ভালো সেট পুরো খেলাটাকে বদলে দিতে পারে। সেটারকে শুধু তার নিজের সতীর্থদের খেলার ধরন জানলেই হয় না, বরং প্রতিপক্ষ দলের ব্লকারদের গতিবিধিও খেয়াল রাখতে হয়। কখনও কখনও সেটার এমনভাবে সেট করে যে অ্যাটাকার মনে হয় যেন শূন্যে ভেসে গিয়ে বল মারছে। এই জন্যই তো সেটিংকে ভলিবল খেলার একটা শিল্প বলা হয়। ভালো সেটাররা খেলার গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে, তাদের সেট দেখে মনে হয় যেন তারা কোনো জাদু দেখাচ্ছে।
অ্যাটাক ও ব্লকের জমজমাট লড়াই
মারাত্মক অ্যাটাক: পয়েন্ট জেতার মূল অস্ত্র
ভলিবল খেলায় অ্যাটাক বা স্পাইক হলো সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ, যা দিয়ে সাধারণত পয়েন্ট অর্জন করা হয়। বল রিসিভ এবং সেটের পর অ্যাটাকাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে বলকে প্রতিপক্ষের কোর্টে আঘাত করার চেষ্টা করে। আমি যখন প্রথম স্পাইক মারতে শিখেছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমি আকাশে উড়ছি!
বাতাসে লাফিয়ে উঠে বলকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করাটা একটা দারুণ অনুভূতি। কিন্তু শুধু জোরে মারলেই হবে না, বলকে এমনভাবে মারতে হবে যেন প্রতিপক্ষ তা আটকাতে না পারে বা রিসিভ করতে না পারে। স্পাইকের বিভিন্ন ধরন আছে – যেমন, লাইন শট, ক্রস কোর্ট শট, টিপস বা ডাইরেক্ট স্ম্যাশ। একজন দক্ষ অ্যাটাকার প্রতিপক্ষের ব্লকার এবং ডিফেন্সের দুর্বলতা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় কোন শট খেলবে। অ্যাটাকারকে শুধু শারীরিকভাবে শক্তিশালী হলেই চলে না, বরং মানসিক দিক থেকেও যথেষ্ট দ্রুত এবং স্মার্ট হতে হয়। তাদের চোখের পলকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একবার আমাদের দলের অ্যাটাকার এমন এক দুর্দান্ত স্ম্যাশ মেরেছিল যে প্রতিপক্ষকে ঘাবড়ে দিয়েছিল, আর আমরা পেয়েছিলাম ম্যাচ পয়েন্ট। অ্যাটাক হলো ভলিবলের সৌন্দর্য, এর মাধ্যমেই খেলার আসল উত্তেজনা ফুটে ওঠে।
শক্তিশালী ব্লক: প্রতিপক্ষকে থামানোর ঢাল
অ্যাটাকের পাল্টা জবাব হলো ব্লক। প্রতিপক্ষ যখন স্পাইক মারার জন্য প্রস্তুত হয়, তখন নেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়রা লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে দেয়াল তৈরি করে, যাতে বল প্রতিপক্ষের কোর্টেই ফিরে যায় বা তার গতি কমে যায়। আমার মনে আছে, প্রথমদিকে ব্লক করতে গিয়ে প্রায়ই আমার হাত নেটে লেগে যেত বা বল পাশ দিয়ে চলে যেত। কিন্তু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শিখেছি যে, ব্লকিংয়ের জন্য সঠিক টাইমিং এবং হাতকে সঠিক পজিশনে রাখাটা কতটা জরুরি। ব্লকারদের শুধু লাফানোই নয়, প্রতিপক্ষ অ্যাটাকারের শটকে অনুমান করার ক্ষমতাও থাকতে হয়। একা ব্লক, ডাবল ব্লক, এমনকি ট্রিপল ব্লকও দেখা যায়, যেখানে ২ বা ৩ জন খেলোয়াড় একসাথে লাফিয়ে উঠে দেয়াল তৈরি করে। একটা সফল ব্লক শুধু প্রতিপক্ষকে পয়েন্ট অর্জন থেকে থামায় না, বরং তাদের মনোবল ভেঙে দেয়। ব্লকাররা যখন সফলভাবে বল ফিরিয়ে দেয়, তখন যেন পুরো দলের মধ্যে একটা নতুন প্রাণ ফিরে আসে। ব্লকিংয়ে সফল হতে হলে ব্লকারকে অ্যাটাকারের গতিবিধি, সেটারের কৌশল এবং বলের উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়।
নিচে একটি সারণীর মাধ্যমে ভলিবল খেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল এবং তাদের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো:
| কৌশল | প্রধান উদ্দেশ্য | গুরুত্বপূর্ণ টিপস |
|---|---|---|
| সার্ভিস | খেলা শুরু করা এবং পয়েন্ট অর্জনের প্রথম সুযোগ তৈরি করা। | বলকে নির্দিষ্ট স্থানে আঘাত করা এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙে দেওয়া। |
| রিসিভ/পাস | প্রতিপক্ষের সার্ভিস বা অ্যাটাক সঠিকভাবে গ্রহণ করা এবং সেটারের কাছে বল পৌঁছে দেওয়া। | শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা, বাহু সোজা রাখা এবং চোখ দিয়ে বলের গতিবিধি অনুসরণ করা। |
| সেটিং | অ্যাটাকারদের জন্য নিখুঁতভাবে বল প্রস্তুত করা। | কব্জির সঠিক ব্যবহার, বলের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিপক্ষ ব্লকারদের গতিবিধি অনুমান করা। |
| অ্যাটাক/স্পাইক | প্রতিপক্ষের কোর্টে বল আঘাত করে পয়েন্ট অর্জন করা। | সঠিক টাইমিংয়ে লাফানো, বলকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করা এবং ব্লকারদের ফাঁকি দেওয়া। |
| ব্লক | প্রতিপক্ষ অ্যাটাকারদের বল আটকে দেওয়া বা গতি কমানো। | সঠিক টাইমিংয়ে লাফানো, হাত সোজা রাখা এবং প্রতিপক্ষ অ্যাটাকারের শট অনুমান করা। |
পজিশন বদল আর রোটেশনের জাদু

নিয়মিত রোটেশন: খেলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
ভলিবল খেলার একটা বিশেষ নিয়ম হলো “রোটেশন”। প্রতিবার যখন কোনো দল সার্ভিসের অধিকার ফিরে পায়, তখন সেই দলের খেলোয়াড়দের ঘড়ির কাঁটার দিকে এক ধাপ করে পজিশন বদল করতে হয়। এই নিয়মটা প্রথমদিকে আমাকে খুব বিভ্রান্ত করত!
মনে হতো, কেন এই পজিশন বদল? কিন্তু পরে বুঝলাম, এর মাধ্যমে দলের সব খেলোয়াড়কে সার্ভ, রিসিভ, অ্যাটাক এবং ডিফেন্স – সব ধরনের ভূমিকাতেই অংশ নিতে হয়। এটা নিশ্চিত করে যে, কোনো একজন খেলোয়াড় যেন নির্দিষ্ট একটা পজিশনে আটকে না থাকে। রোটেশন খেলার গতিশীলতা বাড়ায় এবং সব খেলোয়াড়কে সক্রিয় রাখে। যদি কোনো খেলোয়াড় ভুল পজিশনে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পেয়ে যায়। এই কারণে খেলার আগে খেলোয়াড়দের তাদের রোটেশন পজিশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুব জরুরি। আমাদের কোচ সবসময় বলতেন, “রোটেশন মানেই সুযোগ, নিজেকে প্রমাণের সুযোগ।” এটা অনেকটা নতুন করে খেলা শুরু করার মতোই।
লিবারোর বিশেষ ভূমিকা
ভলিবল দলে লিবারো নামের একজন বিশেষ খেলোয়াড় থাকে, যার জার্সি অন্য খেলোয়াড়দের থেকে আলাদা রঙের হয়। এই লিবারো খেলোয়াড় শুধুমাত্র পেছনের লাইনে খেলতে পারে এবং সে সার্ভিস দিতে পারে না, ব্লক করতে পারে না, বা সামনের লাইন থেকে অ্যাটাকও করতে পারে না। তার মূল কাজ হলো ডিফেন্স এবং বল রিসিভ করা। প্রথমদিকে আমি ভেবেছিলাম, লিবারো বুঝি কম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু পরে যখন দেখলাম, কত কঠিন সব বল সে নিখুঁতভাবে রিসিভ করে দলকে বাঁচায়, তখন বুঝেছি তার গুরুত্ব কতখানি। লিবারোকে মাঠে আনা হয় এমন সময় যখন দলের ডিফেন্স শক্তিশালী করার প্রয়োজন হয়। তার দ্রুত গতি, অসাধারণ রিসিভিং ক্ষমতা, আর বলের প্রতি নির্ভুল দৃষ্টি তাকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত করে। একজন ভালো লিবারো পুরো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে, কারণ তারা জানে যে, যতই শক্তিশালী সার্ভিস বা অ্যাটাক আসুক না কেন, লিবারো সেটা সামলে নিতে পারবে। লিবারোদের জন্যই ভলিবল খেলা আরও বেশি কৌশলগত এবং উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ফল্ট এবং পেনাল্টির খুঁটিনাটি
সাধারণ কিছু ভলিবল ফল্ট
ভলিবলে খেলা চলাকালীন কিছু নির্দিষ্ট ভুলকে ‘ফল্ট’ বলা হয়, আর এই ফল্টগুলোর কারণে প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পেয়ে যায়। আমার মনে আছে, প্রথমদিকে খেলতে গিয়ে প্রায়ই সার্ভিসের সময় বল জালে আটকে ফেলতাম বা লাইন পার করে ফেলতাম, যার ফলে প্রতিপক্ষকে সহজে পয়েন্ট দিয়ে দিতাম। এটা নতুন খেলোয়াড়দের জন্য খুবই সাধারণ একটা ভুল। আরও কিছু সাধারণ ফল্ট হলো – বলকে দু’বার একই খেলোয়াড় দ্বারা স্পর্শ করা (ডাবল হিট), বলকে ধরে রাখা বা ঠেলে দেওয়া (হোল্ডিং/লিফটিং), এবং তিনবারের বেশি স্পর্শ করার পর বল প্রতিপক্ষের কোর্টে না পাঠানো। এছাড়া, নেটে হাত লাগানো বা নেট অতিক্রম করে প্রতিপক্ষের কোর্টের বল স্পর্শ করার চেষ্টা করাও ফল্ট হিসেবে গণ্য হয়। এই ছোট ছোট নিয়মগুলো খেলার গতিপথ বদলে দিতে পারে। রেফারিরা খুব সতর্কতার সাথে এসব ফল্ট পর্যবেক্ষণ করেন। খেলোয়াড়দের জন্য এই নিয়মগুলো ভালোভাবে জানা এবং খেলার সময় সেগুলো মেনে চলা খুব জরুরি, কারণ একটা ছোট ভুল পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
পেনাল্টি ও খেলার সুষ্ঠু পরিচালনা
ফল্ট করার জন্য সাধারণত প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পায় এবং সার্ভিসের অধিকার পায়। তবে কিছু গুরুতর ফল্টের জন্য পেনাল্টি হিসেবে হলুদ বা লাল কার্ডও দেখানো হতে পারে। যেমন, যদি কোনো খেলোয়াড় অসদাচরণ করে, রেফারির সাথে তর্ক করে, বা খেলাকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, তবে রেফারি তাকে কার্ড দেখাতে পারেন। হলুদ কার্ড হলো এক ধরনের সতর্কীকরণ, যা খেলোয়াড়কে বোঝায় যে সে যদি আবারও একই ভুল করে, তবে তাকে আরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। আর লাল কার্ড দেখানোর অর্থ হলো, সেই খেলোয়াড়কে সেট থেকে বা পুরো ম্যাচ থেকে বহিষ্কার করা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে, একবার এক খেলায় আমার এক বন্ধু অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল, যার ফলে তাকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল। পেনাল্টির এই নিয়মগুলো খেলার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং খেলোয়াড়দেরকে শৃঙ্খলাপরায়ণ থাকতে শেখায়। রেফারিরা খেলার আইন প্রয়োগ করে নিশ্চিত করেন যেন খেলাটা公平 এবং পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালিত হয়।
ম্যাচ জেতার আসল মন্ত্র: সেট ও পয়েন্টের হিসেব
সেট জেতার নিয়মাবলী
ভলিবল খেলায় একটি ম্যাচ জিততে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেট জিততে হয়। সাধারণত, সেরা ৫ সেটের মধ্যে ৩ সেট জিতলে ম্যাচ জেতা যায় (বেস্ট অফ ফাইভ)। প্রতিটি সেটে ২৫ পয়েন্ট অর্জন করতে হয়, তবে অবশ্যই প্রতিপক্ষ থেকে কমপক্ষে ২ পয়েন্ট বেশি থাকতে হবে। যেমন, যদি একটি দল ২৫-২৩ পয়েন্টে জয় লাভ করে, তবে তারা সেটটি জিতবে। কিন্তু যদি পয়েন্ট ২৪-২৪ হয়ে যায়, তখন যেমনটা আগে বলেছিলাম, “ডিউস” হয়ে যায়। তখন যে দল ২ পয়েন্টের ব্যবধানে আগে যাবে, তারাই সেটটি জিতবে। আমার মনে আছে, একবার একটা ম্যাচে আমরা ২৫ পয়েন্টে এগিয়ে থেকেও ডিউসে ফেঁসে গিয়েছিলাম, আর সেটটা হেরেছিলাম ৩০-৩২ পয়েন্টে!
সেই অভিজ্ঞতাটা ছিল বেশ হতাশাজনক, কিন্তু এর থেকে শেখার ছিল যে শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। ম্যাচের প্রতিটি সেটই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটি সেট জেতা মানে ম্যাচের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এই সেট জেতার তাগিদই খেলোয়াড়দের আরও বেশি পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে।
টাই-ব্রেকার সেটের উত্তেজনা
যদি কোনো ম্যাচ ২-২ সেটে সমতা হয় (অর্থাৎ, উভয় দলই ২টা করে সেট জিতেছে), তখন শেষ এবং পঞ্চম সেটটি খেলা হয়, যাকে “টাই-ব্রেকার সেট” বা “ডিসাইডিং সেট” বলা হয়। এই সেটটি একটু ভিন্ন নিয়মে চলে – এখানে ২৫ পয়েন্টের বদলে ১৫ পয়েন্ট অর্জন করতে হয়, এবং অবশ্যই ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে হয়। এই সেটটা পুরো ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে, তাই এর উত্তেজনা থাকে অন্যরকম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, টাই-ব্রেকার সেটগুলো সাধারণত খুবই নাটকীয় হয়। প্রতিটি পয়েন্টের জন্য উভয় দল নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দেয়। খেলোয়াড়দের শারীরিক এবং মানসিক উভয় শক্তিরই চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় এই সেটে। রেফারির প্রতিটি সিদ্ধান্ত, খেলোয়াড়দের প্রতিটি পদক্ষেপ – সবকিছুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সেটে যারা নিজেদের নার্ভ ঠিক রাখতে পারে এবং ঠান্ডা মাথায় খেলতে পারে, তারাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। টাই-ব্রেকার সেটগুলো এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ হয় যে দর্শকরাও যেন তাদের সিট ছেড়ে উঠে আসে।
글을মাচি며
ভলিবল খেলাটা শুধু একটা খেলা নয়, এটা যেন একটা জীবন্ত অভিজ্ঞতা! প্রতিটা সার্ভ, প্রতিটা স্পাইক, প্রতিটা ব্লক – সবকিছুর মধ্যেই মিশে থাকে উত্তেজনা আর জয়ের আকাঙ্ক্ষা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই খেলাটা আমাকে শিখিয়েছে দলগত কাজ কতটা জরুরি, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কীভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে লড়তে হয়। মাঠে যখন সবাই মিলে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তখন মনে হয় যেন আমরা শুধু খেলছি না, একটা পরিবারের মতো সবাই সবার পাশে আছি। ভলিবল কোর্টে যে আনন্দ আর শেখার সুযোগ পাওয়া যায়, তা সত্যিই অমূল্য। এই অনুভূতিগুলো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন, যারা খেলেছে তারাই বুঝতে পারে এর আসল মজা। তাই, ভলিবল খেলার এই মন্ত্রগুলো শুধু মাঠে নয়, জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপেও আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
알아দুেন 쓸মো 있는 정보
১. ওয়ার্ম-আপের গুরুত্ব: খেলার আগে পর্যাপ্ত ওয়ার্ম-আপ পেশি শিথিল করে এবং চোটের ঝুঁকি কমায়। হালকা স্ট্রেচিং এবং বল নিয়ে কিছু প্র্যাকটিস খুবই জরুরি।
২. রোটেশন বুঝুন: ভলিবলে রোটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। প্রতিটি পয়েন্টের পর ঘড়ির কাঁটার দিকে পজিশন বদল করার নিয়মটি ভালোভাবে জানলে আপনি সঠিক পজিশনে থাকতে পারবেন এবং পেনাল্টি এড়াতে পারবেন।
৩. মৌলিক কৌশল অনুশীলন করুন: সার্ভিস, রিসিভ, এবং সেটিং – এই তিনটি মৌলিক কৌশল নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনার খেলার মান দ্রুত উন্নত হবে। এগুলোর উপর দক্ষতা অর্জন করা মানেই খেলার অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করা।
৪. দলগত যোগাযোগ: ভলিবল একটি দলগত খেলা। সতীর্থদের সাথে কথা বলা, ইশারা দেওয়া, এবং তাদের কৌশল সম্পর্কে জানা আপনার দলের পারফরম্যান্সকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। ভালো যোগাযোগ মানেই ভালো খেলা।
৫. খেলার আনন্দ উপভোগ করুন: জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। প্রতিটি খেলার মুহূর্ত উপভোগ করুন এবং শেখার চেষ্টা করুন। খেলার প্রতি ভালোবাসা এবং ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে একজন ভালো খেলোয়াড় হতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আরেকবার দেখে নিন
ভলিবল খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলার পরিবেশ তৈরি করা, খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি, সার্ভিসের কৌশল, পয়েন্ট অর্জনের উপায়, রিসিভ ও সেটিংয়ের শিল্প, অ্যাটাক ও ব্লকের তীব্র লড়াই, রোটেশন ও লিবারোর বিশেষ ভূমিকা, ফল্ট এবং পেনাল্টির খুঁটিনাটি, এবং সেট জেতার নিয়মাবলী – এই সবগুলো মিলিয়েই ভলিবল একটি সম্পূর্ণ এবং আকর্ষণীয় খেলা। মনে রাখবেন, ব্যক্তিগত দক্ষতা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ, দলগত বোঝাপড়া এবং কৌশল তার চেয়েও বেশি কার্যকর। প্রতিটি ম্যাচের প্রতিটি পয়েন্টেই থাকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ, আর সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারলেই আপনি হয়ে উঠবেন একজন সত্যিকারের ভলিবল তারকা।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ভলিবল খেলার মূল উদ্দেশ্যটা কী আর কীভাবে পয়েন্ট বা সেট জেতা যায়?
উ: আরে, এই প্রশ্নটা আমারও প্রথমে মনে এসেছিল! আসলে ভলিবল খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো, বলটাকে নেটের উপর দিয়ে প্রতিপক্ষের কোর্টে এমনভাবে ফেলে দেওয়া যাতে তারা সেটাকে সঠিকভাবে ফেরত পাঠাতে না পারে। অথবা, তারা বল ফেরাতে গিয়ে কোনো ভুল করে ফেলে, যেমন বল বাইরে ফেলে দিল বা জালে আটকে দিল। যখন এটা হয়, তখন আমাদের দল একটা পয়েন্ট পেয়ে যায়। সহজ কথায়, প্রতিপক্ষের কোর্টে বল মাটিতে ফেললে বা প্রতিপক্ষ নিয়ম ভাঙলে আমরা পয়েন্ট পাই।পয়েন্ট জেতার ব্যাপারটা বুঝলেন তো!
এবার সেট জেতার কথা বলি। সাধারণত, একটা দলকে একটা সেট জিততে হলে ২৫ পয়েন্ট পেতে হয়, তবে এখানে একটা ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম আছে – প্রতিপক্ষ দলের চেয়ে কমপক্ষে ২ পয়েন্ট বেশি থাকতে হবে। মানে, যদি স্কোর ২৫-২৪ হয়, তাহলে খেলা চলতে থাকবে যতক্ষণ না কোনো দল ২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে যায়, যেমন ২৭-২৫ বা ২৮-২৬। বেশিরভাগ ম্যাচে, যে দল প্রথমে ৩টি সেট জেতে, সেই দলই ম্যাচটা জিতে যায়। তবে, যদি ৪টা সেটের পর স্কোর ২-২ হয়, তাহলে শেষ অর্থাৎ পঞ্চম সেটটা ১৫ পয়েন্টে খেলা হয়, সেখানেও ২ পয়েন্টের ব্যবধানের নিয়মটা একই থাকে।
প্র: ভলিবল খেলার সময় খেলোয়াড়দের পজিশন বা রোটেশন কীভাবে কাজ করে? এটা কি খুব কঠিন কিছু?
উ: সত্যি বলতে কি, রোটেশনের ব্যাপারটা প্রথম প্রথম একটু জটিল মনে হতে পারে, কিন্তু একবার বুঝে গেলে দেখবেন কত সহজ! আমার যখন প্রথম এই রোটেশন শেখানো হলো, তখন মনে হচ্ছিল যেন কোনো ধাঁধা!
আসলে ভলিবলে প্রতি দলে ৬ জন খেলোয়াড় মাঠে থাকে। যখন আমরা সার্ভিস করার অধিকার পাই, তখন আমাদের দলের খেলোয়াড়দের ঘড়ির কাঁটার দিকে এক ধাপ করে পজিশন পরিবর্তন করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটাকেই রোটেশন বলে। এর মূল কারণ হলো, দলের সব খেলোয়াড় যেন সার্ভ করার সুযোগ পায় এবং মাঠে বিভিন্ন পজিশনে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মাঠে নির্দিষ্ট একটা ‘বেস পজিশন’ থাকে, যা সার্ভ শুরুর আগে তাদেরকে মেনে চলতে হয়। সার্ভ হয়ে গেলে তারা কোর্টের মধ্যে কিছুটা নড়াচড়া করতে পারে, তবে কিছু ‘ওভারল্যাপ’ নিয়ম আছে যা তাদের ভাঙা উচিত নয়, মানে একজন খেলোয়াড়কে অন্য নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের থেকে আগে বা পাশে যাওয়া যাবে না যতক্ষণ না সার্ভ হয়ে যায়। আমি দেখেছি, এই রোটেশন ঠিকঠাক না বুঝলে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ফাউল হয়, আর প্রতিপক্ষ সহজে পয়েন্ট পেয়ে যায়। তাই এই নিয়মটা খুব ভালো করে জানা থাকা দরকার, বিশেষ করে যারা দলের মধ্যে সেট পজিশন বা অ্যাটাক পজিশনে থাকে, তাদের জন্য এটা আরও বেশি জরুরি।
প্র: ভলিবলে বল স্পর্শ করার বা পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী বিশেষ নিয়ম মানতে হয়?
উ: এই প্রশ্নটা দারুণ! কারণ বল স্পর্শ করা নিয়েই কিন্তু ভলিবলের আসল মজা আর চ্যালেঞ্জ। মনে আছে, আমি প্রথম যখন ভলিবল খেলেছিলাম, তখন বলটাকে প্রায় ধরে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছিল!
কিন্তু ভলিবলে বল ধরা একদমই নিষিদ্ধ, বলকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে হয়।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো, একটি দল প্রতিপক্ষের কোর্টে বল পাঠানোর আগে সর্বোচ্চ তিনটি স্পর্শ করতে পারবে। এই তিনটি স্পর্শের মধ্যে সাধারণত ‘ডিগ’ (আন্ডারআর্ম পাস), ‘সেট’ (ওভারহেড পাস) এবং ‘স্পাইক’ (আক্রমণাত্মক শট) থাকে। এর বেশিবার বল স্পর্শ করলে সেটা ফাউল হিসেবে ধরা হবে এবং প্রতিপক্ষ দল পয়েন্ট পেয়ে যাবে।আরেকটা মজার বিষয় হলো, একজন খেলোয়াড় পরপর দুইবার বল স্পর্শ করতে পারবে না। তবে এখানে একটা ব্যতিক্রম আছে: যদি একজন খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের অ্যাটাক ব্লক করে, তাহলে সেই ব্লকের স্পর্শটা দলের তিনটি স্পর্শের মধ্যে ধরা হয় না। এরপরও দল আরও তিনটি স্পর্শের সুযোগ পায়। এছাড়াও, যদি সার্ভ করার সময় বল নেটে লেগে প্রতিপক্ষের কোর্টে পড়ে, তাহলে সেটাকে বৈধ সার্ভ ধরা হয়।শরীরের যেকোনো অংশ দিয়ে বলে আঘাত করা যায়, এমনকি পা দিয়েও। তবে বল ধরার মতো করে ধরে রাখা বা দীর্ঘক্ষণ ধরে বল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। জালে হাত বা শরীর স্পর্শ করাও ফাউল হিসেবে ধরা হয়। এই নিয়মগুলো মেনে চললে খেলাটা যেমন আরও রোমাঞ্চকর হয়, তেমনি খেলোয়াড় হিসেবে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগও মেলে।






