খেলাধুলা ভালোবাসেন? নতুন কিছু শুরু করতে চাইছেন যা আপনার শরীর ও মনকে একই সাথে চাঙ্গা রাখবে? তাহলে ভলিবল ক্লাবের সদস্যপদ আপনার জন্য হতে পারে একটি অসাধারণ সুযোগ!
আজকাল আমরা সবাই ব্যস্ত জীবনের মধ্যে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই, যেখানে শরীরচর্চা আর নতুন মানুষের সাথে মেশা দুটোই সম্ভব। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভলিবল খেলাটা শুধু একটা ব্যায়াম নয়, এটি একটি পুরো জীবনযাপন পদ্ধতি। প্রথম যখন শুরু করেছিলাম, শুধু খেলা শেখার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু এর সাথে পেয়েছি এক দারুণ বন্ধুত্বের বন্ধন, টিমওয়ার্কের আনন্দ আর শারীরিক সুস্থতা।ভলিবল খেললে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেশী মজবুত হয়, চোখ ভালো থাকে এবং মানসিক চাপও কমে। বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সক্রিয় থাকার প্রবণতা বেশ বাড়ছে, আর ভলিবল ক্লাবগুলো এই দিক থেকে দারুণ ভূমিকা পালন করে। এখানে আপনি শুধু খেলতেই পারবেন না, বরং একটি চমৎকার সম্প্রদায়ের অংশ হয়ে উঠবেন, যা আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। এই খেলা আপনাকে শৃঙ্খলা, সংকল্প, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং হাত ও চোখের সমন্বয় বাড়াতে সাহায্য করে। তাহলে আর দেরি কেন?
ভলিবল ক্লাবে যোগদানের সমস্ত খুঁটিনাটি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জেনে নেওয়া যাক!
ভলিবল ক্লাবে যোগদানের পর আমার নতুন জীবন

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভলিবল ক্লাবে যোগ দেওয়াটা ছিল আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি। প্রথম যখন শুরু করেছিলাম, শুধু ভেবেছিলাম শরীরচর্চা হবে, কিন্তু এর থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়েছি। খেলার মাঠের ভেতরের উত্তেজনা আর বাইরের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, দুটোই আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রথম কয়েকদিন একটু ইতস্তত করছিলাম, কারণ আমি অতটা খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলাম না। কিন্তু ক্লাবের সবাই এত আন্তরিক ছিল যে খুব দ্রুতই মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম। প্রতিটি প্রশিক্ষণ সেশন ছিল শেখার এক নতুন সুযোগ, আর কোচেরাও খুব ধৈর্য ধরে সব শিখিয়েছিলেন। শুধু শরীর নয়, আমার মনও যেন এক নতুন উদ্দীপনা পেয়েছিল। কাজ শেষে যখন ক্লাবে যেতাম, সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত, আর বাড়ি ফিরতাম এক নতুন চনমনে ভাব নিয়ে।
নতুন বন্ধুদের সাথে বন্ধন
ভলিবল ক্লাব মানেই শুধু খেলা নয়, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় এবং গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। আমি দেখেছি, খেলার মাঠে টিমমেটরা যেমন একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, তেমনি মাঠের বাইরেও তাদের সম্পর্কটা বেশ মজবুত হয়। বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে মিশে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। আমরা শুধু খেলা নিয়েই কথা বলি না, জীবনের নানা দিক নিয়েও আলোচনা করি, যা আমাকে অনেক নতুন কিছু শিখিয়েছে। একসাথে হাসা, একসাথে জেতা-হারা উপভোগ করা, আর একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানো—এটাই যেন ভলিবল ক্লাবের অলিখিত নিয়ম। এই বন্ধুত্বগুলো সত্যিই অমূল্য, যা শুধু খেলার মাধ্যমে নয়, একটি পরিবারের মতো গড়ে উঠেছে।
শারীরিক ও মানসিক চনমনে ভাব
ভলিবল খেলার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আপনাকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখে। প্রতিনিয়ত দৌড়ানো, লাফানো, সার্ভ করা – এ সবকিছুই আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে। আমার মনে আছে, প্রথম দিকে খেলার পর বেশ ক্লান্ত লাগত, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার স্ট্যামিনা অনেক বেড়ে গেল। এখন খেলা শেষেও নিজেকে অনেক সতেজ মনে হয়। আর মানসিক সুস্থতার কথা কী বলব!
কাজের চাপ, দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেস – সবকিছু যেন ভলিবল কোর্টে চলে গেলেই গায়েব হয়ে যায়। বলের উপর মনোযোগ, টিমের সাথে সমন্বয় – এই সব আমাকে বর্তমান মুহূর্তে থাকতে শেখায়, যা মনকে শান্ত ও ফোকাসড রাখতে সাহায্য করে। এটি আমার আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
খেলাধুলায় নতুন দিগন্ত: ভলিবল কিভাবে আপনার জীবন বদলাতে পারে
আমার জীবনে ভলিবল যোগ করার পর সত্যিই মনে হচ্ছে যেন একটি নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। আগে আমার জীবনটা অনেকটাই একঘেয়ে ছিল, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একই রুটিন। কিন্তু ভলিবল ক্লাবে যোগদানের পর আমার প্রতিদিনের জীবনে একটা অন্যরকম উত্তেজনা আর উদ্দীপনা এসেছে। আমি দেখেছি, যখন আমরা নতুন কিছু শুরু করি, তখন প্রথম দিকে একটু জড়তা থাকেই। কিন্তু একবার যখন এই খেলাটার মধ্যে ডুবে গেলাম, তখন বুঝলাম এর গভীরতা কত বেশি। শুধুমাত্র শারীরিক অনুশীলন নয়, এটি আমার মানসিকতার উপরও দারুণ প্রভাব ফেলেছে। খেলার মাঠে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে, আর প্রতিটি জয়ে পেয়েছি আত্মবিশ্বাসের এক নতুন মাত্রা। এই অভিজ্ঞতা আমার ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস আর যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষমতাও তৈরি হয়েছে।
সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন: আপনার খেলার ভিত্তি
যেকোনো খেলায় ভালো পারফর্ম করার জন্য সঠিক সরঞ্জাম থাকাটা খুবই জরুরি, আর ভলিবলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি যখন প্রথম শুরু করি, তখন ভেবেছিলাম যেকোনো সাধারণ জুতো আর পোশাক হলেই চলবে। কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝলাম, খেলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি ভলিবল জুতো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই জুতো আপনার পাকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়, যার ফলে ইনজুরির ঝুঁকি কমে এবং আপনি আরও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেন। এছাড়া, আরামদায়ক স্পোর্টসওয়্যারও খুব দরকারি, যা খেলার সময় আপনার নড়াচড়ায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। ক্লাবে যোগদানের আগে আমি কিছু গবেষণা করেছিলাম এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছিলাম, যার ফলে সঠিক সরঞ্জাম বেছে নিতে আমাকে অনেক সাহায্য হয়েছিল। তাই আমার পরামর্শ হলো, শুরুতেই ভালো মানের সরঞ্জাম কেনার চেষ্টা করুন, যা আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তুলবে এবং আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে খেলতে সাহায্য করবে।
কঠিন প্রশিক্ষণ ও দৃঢ় সংকল্প
ভলিবল খেলার নিয়মকানুন শেখা এবং দক্ষতার উন্নতি ঘটানো একদিনের কাজ নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রয়োজন। আমি যখন প্রথম ক্লাসে যাই, তখন সার্ভ করতে, রিসিভ করতে কিংবা স্পাইক মারতে বেশ সমস্যা হতো। কিন্তু আমাদের কোচ সবসময় বলতেন, “অনুশীলনই সফলতার চাবিকাঠি।” তার কথাগুলো আমাকে অনেক উৎসাহিত করত। প্রতিদিন ক্লাবে যাওয়ার আগে আমি নিজের মনে মনে প্রস্তুতি নিতাম, আজ কী কী শিখব বা কোন দিকে মনোযোগ দেব। অনেক সময় হতাশও হয়েছি, যখন বারবার চেষ্টা করেও পারতাম না। কিন্তু টিমের বন্ধুদের অনুপ্রেরণা আর কোচের ধৈর্যশীল নির্দেশনার কারণে আমি কখনোই হাল ছাড়িনি। আমার মনে আছে, প্রথম যেদিন সফলভাবে একটি স্পাইক মেরেছিলাম, সেদিন আমার আনন্দ দেখে কে!
এই ছোট ছোট অর্জনগুলো আমাকে আরও বেশি করে অনুশীলনের প্রতি আকৃষ্ট করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে কঠিন পরিশ্রম করলে সব কিছুই সম্ভব। ভলিবল আমাকে শিখিয়েছে ধৈর্য ধরতে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলস চেষ্টা করতে।
শুধু খেলা নয়, এটি একটি পরিবার: ভলিবল ক্লাবের অদেখা আনন্দ
সত্যি বলতে কি, ভলিবল ক্লাবে এসে আমি শুধু একটা খেলার মাঠে আসিনি, পেয়েছি একটা নতুন পরিবার। এই অনুভবটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যখন আমি প্রথম ক্লাবে যোগদান করি, তখন একটু একা একা লাগত। কিন্তু খুব দ্রুতই ক্লাবের উষ্ণ পরিবেশ আমাকে আপন করে নিল। এখানে প্রতিটি সদস্য একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, ভুল করলে শেখাতে সাহায্য করে, আর ভালো খেললে উৎসাহ দেয়। আমি দেখেছি, একজন খেলোয়াড় যখন কোনো ব্যক্তিগত সমস্যায় থাকে, তখন ক্লাবের সবাই মিলে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। এটা শুধু খেলার টিমের বন্ধন নয়, এটা জীবনের কঠিন সময়ে পাশে থাকার একটা অঙ্গীকার। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে একসাথে অনুশীলন করা, ম্যাচ খেলা, আর ম্যাচ শেষে একসাথে আড্ডা দেওয়া—এসবই আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই এক পরিবারের সদস্য। এই অদেখা আনন্দ, এই পারস্পরিক সমর্থন আর ভালোবাসা, আমাকে জীবনের অনেক কঠিন মুহূর্ত পার করতে সাহায্য করেছে। ভলিবল কোর্টে আমাদের প্রতিটি ড্রপ, প্রতিটি স্পাইক যেন একতা আর বোঝাপড়ার গল্প বলে।
টিমওয়ার্কের আসল অর্থ অনুধাবন
ভলিবল এমন একটি খেলা যেখানে টিমওয়ার্ক ছাড়া এক পাও এগোনো যায় না। আমি যখন প্রথম খেলা শুরু করি, তখন শুধু নিজের ভালো খেলার দিকেই মনোযোগ দিতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, একজন খেলোয়াড় যতই দক্ষ হোক না কেন, টিমের সহযোগিতা ছাড়া জেতা অসম্ভব। একজন সেট করে, একজন রিসিভ করে, আরেকজন স্পাইক মারে—এই পুরো প্রক্রিয়াটাই নিখুঁত সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল। আমি দেখেছি, যখন টিমের প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি আস্থা রাখে এবং একে অপরের ক্ষমতাকে সম্মান করে, তখনই সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়ে আসে। ম্যাচের সময় যখন একজন খেলোয়াড় বল রিসিভ করতে না পারে, তখন অন্য একজন ছুটে এসে তাকে সাহায্য করে। এই পারস্পরিক নির্ভরতা আর বোঝাপড়া আমাকে শিখিয়েছে যে কীভাবে অন্যদের সাথে কাজ করতে হয় এবং একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসাথে চেষ্টা করতে হয়। এই দক্ষতাটা শুধু খেলার মাঠে নয়, আমার কর্মজীবনেও অনেক কাজে লেগেছে। ভলিবল আমাকে শিখিয়েছে যে একটি টিমের অংশ হওয়া মানে শুধু নিজের কাজ করা নয়, অন্যদের কাজকেও সহজ করে তোলা।
আড্ডা আর হাসিঠাট্টার পরিবেশ
ভলিবল ক্লাবের আরেকটা দারুণ দিক হলো খেলার পরের আড্ডা আর হাসিঠাট্টা। ম্যাচের পর যখন আমরা সবাই একসাথে বসে বিগত দিনের খেলা নিয়ে আলোচনা করি, তখন এক অন্যরকম আনন্দ হয়। কে কেমন খেলল, কোথায় ভুল হলো, কিভাবে আরও ভালো করা যায়—এসব নিয়ে আলোচনা করতে করতেই আমাদের মধ্যে আরও গভীর বন্ধন তৈরি হয়। অনেক সময় খেলা শেষে আমরা একসাথে চা বা কফি খেতে যাই, আর সেখানে শুধুই হাসি আর গল্পের বন্যা বয়ে যায়। এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা আমাদেরকে খেলার চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং একে অপরের সাথে আরও ভালোভাবে মিশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। আমার মনে আছে, একবার একটা কঠিন ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর আমরা সবাই খুব মন খারাপ করেছিলাম। কিন্তু পরে একসাথে বসে হাসিঠাট্টা আর গল্প করতে করতে সেই মন খারাপের রেশ অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। এই হালকা মেজাজের আড্ডাগুলোই ভলিবল ক্লাবকে শুধু একটি খেলার জায়গা না রেখে একটা সামাজিক মিলনকেন্দ্রে পরিণত করেছে।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠি: ভলিবল খেলার উপকারিতা
ভলিবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যম। আমি যখন প্রথম ভলিবল খেলা শুরু করি, তখন প্রধানত ভাবতাম যে এটি আমার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমি আরও অনেক অপ্রত্যাশিত উপকারিতা আবিষ্কার করেছি। এই খেলাটি আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে, ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। প্রতিনিয়ত লাফানো, দৌড়ানো এবং বল অনুসরণ করা আপনার শরীরের প্রায় প্রতিটি পেশীকে সক্রিয় রাখে। আমার মনে আছে, প্রথম দিকে খেলার পর বেশ পেশী ব্যথা হতো, কিন্তু ধীরে ধীরে আমার শরীর এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেল যে এখন মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া, ভলিবল খেলার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, যা আমার চোখ ও মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেস আর টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভলিবল সত্যিই একটি দারুণ উপায়। কোর্টে থাকাকালীন আমার সমস্ত মনোযোগ খেলার দিকেই থাকে, যার ফলে আমি জীবনের অন্যান্য চাপ থেকে সাময়িকভাবে হলেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি এবং এক ধরনের মানসিক শান্তি অনুভব করি।
সুস্থ দেহের জন্য নিয়মিত অনুশীলন
একটি সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন অপরিহার্য। ভলিবল খেলার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে এই অনুশীলনটি করতে পারেন। আমি দেখেছি, যারা নিয়মিত ভলিবল খেলে, তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে এবং পেশীগুলি সুগঠিত হয়। বিশেষ করে আপনার হাত, পা, কাঁধ এবং পেটের পেশীগুলি এই খেলার মাধ্যমে দারুণভাবে উপকৃত হয়। সার্ভ করা, স্পাইক মারা বা বল রিসিভ করার সময় আপনার পুরো শরীরের শক্তি ব্যবহৃত হয়, যা পেশীগুলির সহনশীলতা বাড়ায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতায়, ভলিবল শুরু করার পর থেকে আমার ঘুম অনেক ভালো হয়েছে এবং সামগ্রিক শারীরিক শক্তিও অনেক বেড়েছে। খেলাধুলা আমার হজম প্রক্রিয়াকেও উন্নত করেছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। তাই যদি আপনি একটি মজাদার এবং কার্যকর উপায়ে সুস্থ থাকতে চান, তবে ভলিবল আপনার জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। এই খেলা আপনাকে কেবল ফিট রাখে না, বরং আপনাকে আরও উদ্যমী ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
মানসিক চাপ কমাতে ভলিবল
আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু ভলিবল খেলা এই চাপ কমানোর একটি অসাধারণ উপায়। আমি যখন খেলার মাঠে নামি, তখন আমার সমস্ত চিন্তা আর দুশ্চিন্তা যেন বাতাসে উড়ে যায়। বলের উপর মনোযোগ দেওয়া, টিমের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা চিন্তা করা—এসব কিছু আমাকে বর্তমান মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে নিমগ্ন করে রাখে। এর ফলে আমার মন অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বিচলিত হতে পারে না। খেলার সময় হাসা, মজা করা এবং টিমের সাথে জয়-পরাজয় ভাগ করে নেওয়া এক ধরনের সামাজিক সমর্থন প্রদান করে, যা মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলার পর শরীরিক শ্রান্তির সাথে সাথে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিও আসে। আমি দেখেছি, নিয়মিত ভলিবল খেলার পর আমার মেজাজ অনেক ভালো থাকে এবং আমি আরও বেশি ইতিবাচক অনুভব করি। এটি আমার উদ্বেগ এবং হতাশা কমাতেও সাহায্য করেছে, যা আমাকে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম করেছে।
| উপকারিতা | বিস্তারিত বর্ণনা |
|---|---|
| শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি | ভলিবল কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে, পেশী শক্তিশালী করে এবং নমনীয়তা বাড়ায়। |
| ওজন নিয়ন্ত্রণ | নিয়মিত খেলার মাধ্যমে ক্যালোরি পোড়ানো হয়, যা ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। |
| হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি | লাফানো এবং দৌড়ানোর মতো ক্রিয়াকলাপ হাড়কে মজবুত করে তোলে। |
| মানসিক সুস্থতা | স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়, মেজাজ ভালো রাখে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। |
| টিমওয়ার্ক ও সামাজিক দক্ষতা | দলের সাথে কাজ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। |
| হাত-চোখের সমন্বয় | বলের গতিবিধি অনুসরণ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ে। |
সফলতার সিঁড়ি: টিমওয়ার্ক আর ভলিবল

ভলিবল এমন এক খেলা যা আপনাকে শুধু শারীরিক দিক থেকেই নয়, মানসিকভাবেও অনেক কিছু শেখায়। আমার মনে হয়, এই খেলাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো টিমওয়ার্ক। যখন আপনি একটি দলের অংশ হিসেবে খেলেন, তখন আপনি বুঝতে পারেন যে একা কোনো কিছুই সম্ভব নয়। প্রতিটি খেলোয়াড়কে তার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয় এবং দলের অন্য সদস্যদের উপর ভরসা রাখতে হয়। আমি দেখেছি, একটি ম্যাচে যখন সব খেলোয়াড় একসাথে কাজ করে, তখন অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা যায়। যেমন, একজন প্লেয়ার হয়তো দারুণ সার্ভ করল, কিন্তু রিসিভ যদি ঠিক মতো না হয়, তাহলে সেই সার্ভের কোনো মূল্য থাকে না। আবার, একজন যদি সুন্দরভাবে সেট করে, তাহলে স্পাইকার সহজেই পয়েন্ট এনে দিতে পারে। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আমাকে শিখিয়েছে যে কীভাবে অন্যদের সাথে কাজ করতে হয় এবং একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসাথে প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এই দক্ষতাটা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে এবং কর্মজীবনেও খুব কাজে লাগিয়েছি, যার ফলে আমি অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।
নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি
ভলিবল খেলার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলীও তৈরি হয়। যদিও একজন অফিসিয়াল ক্যাপ্টেন থাকে, তবে খেলার মাঠে সবাইকেই কোনো না কোনো সময় নেতৃত্ব দিতে হয়। হয়তো বল রিসিভ করার সময় কেউ একজন “Mine!” বলে অন্যদের সরে যেতে নির্দেশ দিল, অথবা কেউ একজন কৌশল পরিবর্তন করার জন্য বাকিদের সাথে আলোচনা করল। এই ধরনের ছোট ছোট নেতৃত্বগুলো টিমের মনোবল ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমি যখন প্রথম খেলা শুরু করি, তখন নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আমি খুব লাজুক ছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে, খেলার পরিস্থিতি আমাকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে এখন আমি নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং আমার টিমের অন্য সদস্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। এই নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আমাকে আরও দায়িত্বশীল হতে শিখিয়েছে। ভলিবল আমাকে দেখিয়েছে যে একজন ভালো নেতা শুধু আদেশ দেয় না, বরং টিমের প্রতিটি সদস্যকে উৎসাহিত করে এবং তাদের সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করে।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি
ভলিবল কোর্টে প্রতিটি ম্যাচই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। কখনো প্রতিপক্ষের আক্রমণ খুব শক্তিশালী হয়, আবার কখনো আমাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধনে সমস্যা হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা অপরিহার্য। আমি দেখেছি, যখন আমরা কোনো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তখন টিমের সবাই মিলে আলোচনা করে একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। হয়তো একজন নতুন কৌশল প্রস্তাব করে, আবার কেউ হয়তো নির্দিষ্ট একজন খেলোয়াড়ের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়। এই দ্রুত চিন্তা করা এবং সমস্যার সমাধান করার প্রক্রিয়া আমাকে শিখিয়েছে যে কীভাবে চাপের মধ্যেও শান্ত থাকতে হয় এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই দক্ষতাটা শুধু খেলার মাঠে নয়, দৈনন্দিন জীবনেও আমার অনেক কাজে আসে। ভলিবল আমাকে শিখিয়েছে যে প্রতিটি সমস্যাই আসলে একটি সুযোগ, যেখানে আপনি নিজের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ দিতে পারেন।
যোগদানের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস: আপনার ভলিবল যাত্রা শুরু করার আগে
ভলিবল ক্লাবে যোগদানের সিদ্ধান্তটি দারুণ, কিন্তু শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা ভালো। আমি যখন প্রথমবার ভলিবল ক্লাবে যোগ দিই, তখন আমার কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা ছিল না, যা থাকলে হয়তো আমার অভিজ্ঞতা আরও ভালো হতে পারত। তাই আমি চাই আপনারা যেন সেই ভুলগুলো না করেন। সবার আগে, আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খেলায় নামা উচিত। ভলিবল বেশ গতিশীল একটি খেলা, তাই সুস্থ শরীর খুবই জরুরি। এছাড়া, আপনার এলাকার কাছাকাছি ভালো ভলিবল ক্লাবগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। ক্লাবের পরিবেশ কেমন, কোচের অভিজ্ঞতা কতটুকু, এবং অন্য সদস্যরা কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ – এই বিষয়গুলো আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে অনেক প্রভাবিত করবে। আমার মনে আছে, আমি কয়েকটা ক্লাবে গিয়ে সরাসরি কথা বলেছিলাম, তাদের অনুশীলন দেখেছিলাম, তারপর আমার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্লাবটি বেছে নিয়েছিলাম। এই প্রাথমিক গবেষণা আপনাকে সেরা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
সঠিক ক্লাবের নির্বাচন
একটি ভালো ভলিবল ক্লাব খুঁজে বের করা আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে অনেকাংশে প্রভাবিত করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটি ভালো ক্লাব মানে শুধু ভালো প্রশিক্ষক নয়, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক পরিবেশও। যখন আপনি একটি নতুন ক্লাবে যোগদান করবেন, তখন দেখুন সেখানকার সদস্যরা কেমন। তারা কি আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে?
তারা কি আপনাকে সাহায্য করতে আগ্রহী? ক্লাবের অনুশীলনের সময়সূচী এবং আপনার ব্যক্তিগত রুটিনের সাথে মেলে কিনা, সেটাও খুব জরুরি। কিছু ক্লাবের ফোকাস থাকে প্রতিযোগিতা জেতার উপর, আবার কিছু ক্লাব শুধু মজাদার অনুশীলন এবং সামাজিক মেলামেশার উপর জোর দেয়। আপনার লক্ষ্য কী, সেই অনুযায়ী ক্লাব নির্বাচন করুন। আমি প্রথম দিকে একটি ক্লাবে গিয়েছিলাম যেখানে প্রতিযোগিতা জয়ের উপর খুব বেশি চাপ দেওয়া হতো, যা আমার জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না। পরে আমি এমন একটি ক্লাবে যোগদান করি যেখানে মজা করে শেখার উপর জোর দেওয়া হতো, এবং সেটা আমার জন্য অনেক ভালো ছিল। তাই আপনার চাহিদা অনুযায়ী ক্লাব নির্বাচন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা
ভলিবল খেলা শুরু করার আগে কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। প্রথমেই নিশ্চিত করুন আপনার কাছে খেলার জন্য উপযুক্ত পোশাক এবং জুতো আছে। আগেই বলেছি, ভালো মানের ভলিবল জুতো ইনজুরি প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। এছাড়া, একটি ছোট জলের বোতল এবং একটি তোয়ালে সবসময় আপনার সাথে রাখুন। অনুশীলনের সময় প্রচুর ঘাম হয়, তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুব জরুরি। আমি দেখেছি, অনেকেই প্রাথমিক ওয়ার্ম-আপ বা স্ট্রেচিংকে গুরুত্ব দেয় না, যা ইনজুরির কারণ হতে পারে। ক্লাবে যোগদানের আগে আপনি ইউটিউবে কিছু বেসিক ওয়ার্ম-আপ এক্সারসাইজ দেখে নিতে পারেন এবং অনুশীলনের আগে সেগুলো নিয়মিত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কোচের নির্দেশাবলী মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং কোনো কিছু বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না। প্রথম দিকে ভুল করাটা স্বাভাবিক, তাই ভুল থেকে শিখুন এবং ধৈর্য ধরুন। মনে রাখবেন, আপনার ভলিবল যাত্রা একটি ম্যারাথন, স্প্রিন্ট নয়।
ভলিবল ক্লাবের খরচাপাতি: একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভলিবল ক্লাবে যোগদানের কথা ভাবলে খরচাপাতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আমি যখন প্রথমবার ক্লাবে যোগদানের কথা ভাবি, তখন ভাবিনি যে এর পেছনে এত খরচ থাকতে পারে। মাসিক ফি, সরঞ্জামের খরচ, টুর্নামেন্টের ফি – সব মিলিয়ে একটি বাজেট তৈরি করা খুব জরুরি। ক্লাবের মাসিক বা বার্ষিক সদস্যপদ ফি বিভিন্ন ক্লাবে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি ক্লাব নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ। আমার মনে আছে, আমি শুরুতে একটু সস্তা ক্লাব খুঁজেছিলাম, কিন্তু পরে বুঝলাম যে কোয়ালিটি ট্রেনিংয়ের জন্য কিছুটা বেশি খরচ করা ভালো। তবে সব সময়ই দাম বেশি মানেই ভালো সার্ভিস তা নয়। অনেক সময় মাঝারি দামের ক্লাবগুলোও দারুণ প্রশিক্ষণ ও পরিবেশ প্রদান করে। তাই শুধু দাম দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, ক্লাবের সামগ্রিক পরিবেশ এবং সুবিধার দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।
সদস্যপদ ফি এবং প্রশিক্ষণের খরচ
ভলিবল ক্লাবের সদস্যপদ ফি সাধারণত আপনার ক্লাবের ধরন, প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা এবং উপলব্ধ সুবিধার উপর নির্ভর করে। কিছু ক্লাবে মাসিক ফি নেওয়া হয়, আবার কিছু ক্লাবে ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ফি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। আমি দেখেছি, কিছু ক্লাব নতুনদের জন্য প্রথম মাস বা সপ্তাহে ডিসকাউন্ট অফার করে, যা একটি ভালো সুযোগ হতে পারে ক্লাবের পরিবেশ বোঝার জন্য। এছাড়াও, ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের জন্য অতিরিক্ত ফি লাগতে পারে, যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে আপনার দক্ষতা উন্নত করতে চান। আমার প্রথম ক্লাবের মাসিক ফি ছিল মোটামুটি সাশ্রয়ী, যা আমার বাজেটের মধ্যে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ক্লাবের ফি কিছুটা বেশি হলেও সেখানে প্রশিক্ষণের মান অনেক উন্নত ছিল, যা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল। তাই ফি নিয়ে ক্লাবের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে নিন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়।
অতিরিক্ত খরচ: সরঞ্জাম ও টুর্নামেন্ট
সদস্যপদ ফি ছাড়াও ভলিবল খেলার জন্য কিছু অতিরিক্ত খরচ থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো খেলার সরঞ্জাম। আগেই বলেছি, ভালো মানের ভলিবল জুতো এবং পোশাক কেনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ব্যক্তিগত অনুশীলনের জন্য নিজস্ব ভলিবল কেনার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথম দিকে আমি বন্ধুর জুতো নিয়ে খেলেছিলাম, কিন্তু পরে যখন নিজের জুতো কিনলাম, তখন খেলার মান অনেকটাই উন্নত হলো। যদি আপনি প্রতিযোগিতামূলক ভলিবল খেলতে আগ্রহী হন, তাহলে টুর্নামেন্টের রেজিস্ট্রেশন ফি এবং যাতায়াত খরচও আপনার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অনেক সময় ক্লাবের নিজস্ব জার্সিরও খরচ থাকে। আমার মনে আছে, একবার একটি দূরবর্তী টুর্নামেন্টে যাওয়ার জন্য আমাদের টিমের সবাই মিলে চাঁদা তুলেছিলাম, যা টিমের বন্ধনকে আরও মজবুত করেছিল। তাই, খেলার সরঞ্জাম এবং প্রতিযোগিতার খরচগুলিও আগে থেকে বিবেচনা করে রাখা ভালো, যাতে অপ্রত্যাশিত কোনো আর্থিক চাপ না আসে।
উপসংহার
ভলিবল ক্লাবে যোগদানের এই যাত্রা আমার জন্য ছিল এক নতুন আবিষ্কার। শুধু শরীরচর্চাই নয়, এটি আমাকে দিয়েছে নতুন বন্ধু, মানসিক শান্তি আর জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই খেলাটা আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্যশীল এবং একজন ভালো টিম প্লেয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটিয়ে প্রাণবন্ত থাকতে ভলিবল সত্যিই জাদুর মতো কাজ করে। যদি আপনিও নতুন কিছু শুরু করার কথা ভাবছেন, তাহলে ভলিবল আপনার জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। একবার চেষ্টা করেই দেখুন, আপনার জীবনও বদলে যেতে পারে!
কাজের কিছু তথ্য
১. সঠিক ক্লাব নির্বাচন করুন: আপনার লক্ষ্য এবং ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই একটি ক্লাব বেছে নিন। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক আছে এমন ক্লাবগুলো আপনার জন্য সেরা হবে।
২. প্রাথমিক সরঞ্জাম নিশ্চিত করুন: ভালো মানের ভলিবল জুতো এবং আরামদায়ক পোশাক বিনিয়োগ করুন। এটি ইনজুরি প্রতিরোধে সাহায্য করবে এবং আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
৩. ওয়ার্ম-আপ ও স্ট্রেচিংকে গুরুত্ব দিন: অনুশীলনের আগে এবং পরে পর্যাপ্ত ওয়ার্ম-আপ এবং স্ট্রেচিং করুন। এটি পেশীগুলিকে প্রস্তুত করে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়।
৪. ধৈর্য ধরুন এবং ধারাবাহিক থাকুন: প্রথম দিকে ভুল করাটা স্বাভাবিক। হতাশ না হয়ে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যান। ধারাবাহিকতাই সফলতার চাবিকাঠি।
৫. টিমমেটদের সাথে মিশুন: ভলিবল একটি টিম গেম। আপনার টিমের সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। এতে খেলার মান উন্নত হবে এবং নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ
ভলিবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি সুস্থ জীবনযাপন এবং সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই খেলা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং টিমওয়ার্কের গুরুত্ব শেখায়। সঠিক ক্লাব নির্বাচন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবহার এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে যে কেউ ভলিবলের এই অসাধারণ জগতে প্রবেশ করতে পারে। এটি শুধু আপনার শরীরকেই সতেজ রাখে না, বরং নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এবং জীবনে আরও বেশি আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এটি এমন একটি পরিবার যা আপনাকে সবসময় সমর্থন ও অনুপ্রেরণা দেবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ভলিবল ক্লাবে যোগ দিলে আসলে কী কী লাভ হবে? শুধু শরীরচর্চা নাকি আরও কিছু?
উ: আরে বাবা! ভলিবল ক্লাবে যোগ দেওয়াটা শুধু কিছু সাধারণ শরীরচর্চা নয়, এটা একটা দারুণ প্যাকেজ বললেই চলে! আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমি যখন প্রথম ভলিবল খেলা শুরু করি, তখন শুধু ভেবেছিলাম একটু ফিজিক্যালি অ্যাক্টিভ থাকব। কিন্তু সত্যি বলতে, এর থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়েছি। প্রথমত, শারীরিক দিক থেকে এটা দারুণ উপকারী। নিয়মিত খেললে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেশীগুলো আরও মজবুত হয়, বিশেষ করে পায়ের আর হাতের মাসলগুলো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এর মাধ্যমে আপনার চোখের সাথে হাতের দারুণ একটা সমন্বয় তৈরি হয়, যা দৈনন্দিন জীবনেও খুব কাজে লাগে। আর হার্টের জন্যেও এটা চমৎকার একটা ব্যায়াম। দ্বিতীয়ত, মানসিক দিক থেকে ভলিবল খেলাটা একটা আশীর্বাদ। কাজের চাপ বা পরীক্ষার টেনশন থেকে মুক্তি পেতে এর জুড়ি মেলা ভার। খেলার মাঠে যখন মন দিয়ে বলের দিকে নজর রাখেন, তখন সব চিন্তা উধাও হয়ে যায়, মনটা একদম ফুরফুরে লাগে। আমার মনে আছে, একটা কঠিন দিন পার করার পর ভলিবল কোর্টে গিয়ে সব ক্লান্তি ভুলে যেতাম। আর সবশেষে, সামাজিক দিকটা!
ভলিবল একটা টিম গেম, তাই এখানে আপনি নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হবেন, বন্ধুত্বের একটা চমৎকার বন্ধন তৈরি হবে। একসাথে জেতার আনন্দ আর হারার কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে একটা অন্যরকম ভালো লাগা আছে। এটা আপনাকে টিমওয়ার্ক শেখাবে, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী বাড়াবে এবং আত্মবিশ্বাস জোগাবে। বিশ্বাস করুন, খেলাটা আপনার জীবনকে আরও গতিময় আর আনন্দময় করে তুলবে।
প্র: ভলিবল খেলার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও কি ক্লাবে যোগ দিতে পারব? নতুনদের জন্য কি কোনো বিশেষ ব্যবস্থা থাকে?
উ: একদম ১০০% পারবেন! অনেকেই হয়তো ভাবেন, “আমার তো কোনো অভিজ্ঞতা নেই, আমি কি পারব?” কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে, ভলিবল ক্লাবে যোগ দেওয়ার জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকাটা জরুরি নয়। বেশিরভাগ ক্লাবই নতুনদের ভীষণভাবে স্বাগত জানায়। আমি যখন প্রথম ক্লাবে গিয়েছিলাম, তখন আমি ভলিবলের ‘ভ’ ও ঠিকমতো জানতাম না!
কিন্তু কোচের আর দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের সাহায্য আর অনুপ্রেরণায় খুব দ্রুতই অনেক কিছু শিখে ফেলেছিলাম। আসলে, শেখার প্রক্রিয়াটাই তো সবচেয়ে মজার! ক্লাবগুলোতে সাধারণত নতুনদের জন্য আলাদা সেশন থাকে অথবা এমনভাবে ট্রেনিং করানো হয় যাতে সবাই একসাথে শিখতে পারে। এখানে আপনাকে খেলার প্রাথমিক নিয়ম, বল সার্ভ করা, রিসিভ করা, সেট করা – সবকিছু ধাপে ধাপে শেখানো হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে আপনার ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার জন্য সবাই পাশে থাকবে। তাই আপনার শুধু দরকার একটু আগ্রহ আর খেলার প্রতি ভালোবাসা। একবার মাঠে নেমে পড়লে দেখবেন, শেখাটা কত সহজ আর আনন্দদায়ক হয়ে যায়। আপনার মতো নতুনদের জন্যই তো অনেক ক্লাব তাদের দরজা খোলা রাখে, যাতে সবাই এই চমৎকার খেলাটার অংশ হতে পারে।
প্র: ভলিবল ক্লাবে যোগ দিতে কেমন সময় এবং খরচ লাগতে পারে? এটা কি আমার দৈনন্দিন রুটিনের সাথে মানানসই হবে?
উ: ভলিবল ক্লাবে যোগ দেওয়ার সময় আর খরচের ব্যাপারটা আসলে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন আপনি কোন ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন বা আপনার এলাকায় ক্লাবের ধরন কেমন। তবে আমি আপনাকে একটা সাধারণ ধারণা দিতে পারি। সাধারণত, ক্লাবগুলো সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন প্র্যাকটিস সেশন রাখে, যা বেশিরভাগ সময়েই বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে হয়, যাতে স্কুল বা অফিসের পর সবাই যোগ দিতে পারে। আমার মনে হয়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অনেক ক্লাব অনুশীলন করে। প্রতিটি সেশন সাধারণত ১ থেকে ২ ঘণ্টা করে হতে পারে। তাই, আপনার দৈনন্দিন রুটিনের সাথে মানানসই একটা ক্লাব খুঁজে বের করাটা খুব কঠিন হবে না।খরচের কথা বলতে গেলে, প্রতিটি ক্লাবের সদস্যপদ ফি (membership fee) ভিন্ন হয়। কিছু ক্লাবের মাসিক ফি থাকে, আবার কিছু ক্লাবের বার্ষিক ফি থাকে। এই ফি সাধারণত ক্লাবের সুযোগ-সুবিধা, কোচের মান এবং খেলার সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেওয়া হয়। যেমন, কিছু ক্লাবে ইনডোর কোর্টের ব্যবস্থা থাকে, যার খরচ একটু বেশি হতে পারে। আবার, আউটডোর কোর্টের ফি তুলনামূলকভাবে কম হয়। তবে, ভলিবল খেলতে আপনার খুব বেশি দামি সরঞ্জামের দরকার হয় না – শুধু একজোড়া ভালো স্পোর্টস শু আর আরামদায়ক পোশাক হলেই চলে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, এই খরচটা আসলে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং নতুন বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য একটা দারুণ বিনিয়োগ। অন্য অনেক বিনোদনের খরচের চেয়ে এটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। তাই, আপনার বাজেট আর সুবিধার সাথে মিলিয়ে একটা ভালো ক্লাব খুঁজে বের করুন। আমি নিশ্চিত, এই বিনিয়োগ আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী আনন্দ আর সুস্থ জীবন উপহার দেবে!






