হ্যালো, আমার প্রিয় ভলিবল ফ্যানেরা! মাঠে নামলে নিজেদের সেরাটা দিতে কে না চায়, বলুন তো? কিন্তু শুধু কঠোর পরিশ্রমই সব নয়, এর পেছনে সঠিক প্রস্তুতি আর মানানসই সরঞ্জামও ভীষণ জরুরি। একজন ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, উপযুক্ত ট্রেনিং সাপ্লাই আমাদের খেলাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। বাজারে এত সব পণ্যের ভিড়ে সেরাটা খুঁজে নেওয়াটা প্রায়ই বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। তাই আপনাদের এই দ্বিধা দূর করতে, আজ আমি হাজির হয়েছি ভলিবল ট্রেনিংয়ের অত্যাবশ্যকীয় সব সরঞ্জাম নিয়ে। চলুন, এই বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক!
খেলার মাঠে পায়ের সুরক্ষা: সঠিক জুতার গুরুত্ব

বন্ধুরা, মাঠে নামলে পায়ের নিচে যে জিনিসটা সবার আগে আসে, সেটা হলো জুতা! একজন ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে আমি বারবার অনুভব করেছি যে, ভুল জুতা কতটা ভোগাতে পারে। আমার মনে আছে, একবার এক টুর্নামেন্টে আমার পুরোনো জুতা ছিঁড়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে একটা সাধারণ স্পোর্টস শু কিনেছিলাম। কী যে ভুল করেছিলাম! পুরো খেলায় লাফাতে, ঘুরতে গিয়ে মনে হচ্ছিল পাগুলো যেন আমার নয়। বার বার পা মচকে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিলাম আর আমার পারফরম্যান্সও মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছিল। সঠিক ভলিবল জুতা শুধু আরামই দেয় না, আমাদের গতি, ভারসাম্য এবং সর্বোপরি আঘাত থেকে রক্ষা করে। ভলিবল খেলাটার প্রকৃতিই এমন যে, অনেক দ্রুত গতিতে দৌড়ানো, লাফানো আর দিক পরিবর্তন করতে হয়। তাই পায়ের গোড়ালিতে পর্যাপ্ত সাপোর্ট, ভালো গ্রিপ আর হালকা ওজনের জুতা থাকাটা ভীষণ জরুরি। আমি দেখেছি অনেক নতুন খেলোয়াড়কে এ ব্যাপারে ভুল করতে, আর এর মাশুলও তাদের গুনতে হয়। তাই, আমার অভিজ্ঞতায়, ট্রেনিংয়ের শুরুতেই একটা ভালো ভলিবল জুতা কেনাটা যেকোনো অন্য সরঞ্জামের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়, যখন আপনি জানেন আপনার পা সুরক্ষিত আছে এবং আপনি কোনো বাধা ছাড়াই আপনার সেরাটা দিতে পারবেন।
সঠিক ভলিবল জুতা কেন এত জরুরি?
সঠিক ভলিবল জুতা বেছে নেওয়াটা আসলে শুধু ফ্যাশন বা আরামের ব্যাপার নয়, এটা সরাসরি আপনার খেলার পারফরম্যান্স আর সুরক্ষার সাথে জড়িত। ভলিবলে দ্রুত গতিতে দিক পরিবর্তন, লাফানো এবং ল্যান্ডিং খুবই সাধারণ ঘটনা। এসব মুহূর্তে পায়ের ওপর অনেক চাপ পড়ে। ভলিবল জুতাগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয় যাতে তারা এই চাপগুলো সামলাতে পারে এবং পাকে সঠিক সাপোর্ট দিতে পারে। যেমন, এদের সোলগুলো নন-মার্কিং রাবার দিয়ে তৈরি হয়, যা ইন্ডোর কোর্টে দারুণ গ্রিপ দেয়। এর ফলে আপনি পিছলে যাওয়ার ভয় ছাড়াই দ্রুত মুভ করতে পারেন। এছাড়াও, গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় অতিরিক্ত কুশন ও সাপোর্ট থাকে, যা লাফিয়ে নামার সময় শক অ্যাবজর্ব করে এবং মোচড়ানোর ঝুঁকি কমায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন আমি Mizuno-এর একটা ভালো মডেলের জুতা ব্যবহার করা শুরু করি, তখন আমার লাফানোর শক্তি এবং ল্যান্ডিংয়ের স্থায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এটা আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল কঠিন স্পাইক মারতে বা ডিফেন্স করতে।
আমার অভিজ্ঞতা: ভুল জুতার মাশুল
প্রায় দশ বছর আগে যখন প্রথম ভলিবল খেলা শুরু করি, তখন জুতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। প্রথম প্রথম যেকোনো স্পোর্টস শু পরেই খেলতে চলে যেতাম। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! কোর্টে একবার ল্যান্ডিং করার সময় আমার পা এমনভাবে মচকে গিয়েছিল যে এক সপ্তাহ আমাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ডাক্তার বললেন, ভুল জুতার কারণেই এমনটা হয়েছে। এরপর থেকে আমি জুতার ব্যাপারে ভীষণ সচেতন হয়ে গেছি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা নিয়ে গবেষণা করেছি, বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেছি, এমনকি পেশাদার খেলোয়াড়দের মতামতও নিয়েছি। আমি বুঝেছি, প্রতিটি ব্র্যান্ডের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, ASICS-এর কিছু মডেলে GEL কুশনিং থাকে যা শক অ্যাবজর্বশনে দারুণ। Nike বা Adidas-এর জুতাগুলো সাধারণত হালকা হয় এবং দ্রুত গতির জন্য ভালো। এখন আমি সবসময় এমন জুতা কিনি যা আমার পায়ের গঠন এবং খেলার স্টাইলের সাথে মানানসই। একবার ভুল করে একটি সস্তার জুতা কিনেছিলাম, যা খেলার মাঝপথেই পায়ের তলায় ঘষা লেগে ফোস্কা ফেলে দেয়। সেদিনের কষ্টটা আজও মনে আছে। তাই আর ভুল নয়, ভালো জুতা মানেই ভালো খেলা।
আঘাত থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম
ভলিবল একটি গতিশীল খেলা, যেখানে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কখনোই পুরোপুরি এড়ানো যায় না। কিন্তু সঠিক প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। একজন অ্যাটাকার হিসেবে আমাকে প্রায়শই ডাইভ দিতে হয় বা ফ্লোরে পড়ে বল উঠাতে হয়। আমার মনে আছে, শুরুর দিকে আমি প্যাড ছাড়াই খেলতাম। এর ফল ছিল মারাত্মক। হাঁটু ছিলে যেত, কনুইতে কালশিটে পড়তো, যা প্রায়শই আমাকে খেলার বাইরে রাখত। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে, প্যাড ব্যবহার করাটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটা বুদ্ধিমত্তা আর নিজের প্রতি যত্নশীলতার লক্ষণ। বিশেষ করে, হাঁটুর প্যাড এবং কনুই প্যাডগুলো ভীষণ জরুরি। এগুলোর কাজ শুধু আঘাত থেকে রক্ষা করাই নয়, বরং খেলোয়াড়কে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলা যাতে তারা ভয় না পেয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারে। আমি দেখেছি অনেক প্রো-প্লেয়ারকেও প্যাড ব্যবহার করতে, কারণ তারা জানে সামান্য একটা ডাইভ দিতে গিয়ে পুরো সিজন নষ্ট হয়ে যেতে পারে যদি তারা সুরক্ষিত না থাকে। তাই, ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় ভালো মানের প্যাড ব্যবহার করার পরামর্শ দিই।
হাঁটুর প্যাড: প্রত্যেক ভলিবল খেলোয়াড়ের রক্ষাকবচ
হাঁটুর প্যাড হলো ভলিবল খেলোয়াড়দের জন্য অপরিহার্য একটি জিনিস। মাঠে ডাইভ দেওয়া, ফ্লোরে পড়ে বল বাঁচানো বা দ্রুত দিক পরিবর্তন করার সময় হাঁটুতে মারাত্মক আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকে। আমার দীর্ঘদিনের খেলার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক খেলোয়াড়ই হাঁটুর প্যাডকে ততটা গুরুত্ব দেন না, কিন্তু সামান্য অসাবধানতা গুরুতর ইনজুরির কারণ হতে পারে। আমি নিজে একবার প্যাড ছাড়া খেলতে গিয়ে হাঁটুর মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলাম, যার জন্য বেশ কিছুদিন আমার খেলা বন্ধ ছিল। সেই অভিজ্ঞতাটা আমার জীবনের একটা বড় শিক্ষা। এরপর থেকে আমি সবসময় সেরা মানের হাঁটুর প্যাড ব্যবহার করি। বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন Mizuno, ASICS, বা Nike-এর প্যাডগুলো বেশ জনপ্রিয়। এগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে হাঁটুতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতাও বজায় থাকে। প্যাডগুলো নরম হলেও ভেতরের ফোমটি শক্তিশালী হয়, যা আঘাতের তীব্রতা শোষণ করে। সঠিক আকারের প্যাড বেছে নেওয়াও জরুরি, কারণ বেশি ঢিলা বা বেশি টাইট প্যাড অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
কনুই প্যাড ও অন্যান্য ছোটখাটো সুরক্ষা
হাঁটুর প্যাডের মতো কনুই প্যাডও ভলিবল খেলোয়াড়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা ডিফেন্স বা ফ্লোর ডিফেন্সে বেশি সময় কাটান। বল বাঁচানোর জন্য ডাইভ দেওয়ার সময় প্রায়শই কনুইতে আঘাত লাগে। আমার কিছু বন্ধু আছে যারা কনুই প্যাড ব্যবহার করতে পছন্দ করে না, কিন্তু তাদের কনুইতে প্রায়শই কালশিটে বা ছিলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। আমি দেখেছি, বিশেষ করে যখন কোনো ফ্লোর বেশি শক্ত হয় বা যখন আপনি স্লাইড করে বল বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তখন কনুই প্যাডগুলো দারুণ কাজে আসে। এগুলি হালকা হলেও যথেষ্ট সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও, অনেক খেলোয়াড় আঙুল বা কব্জির জন্য টেপ বা হালকা ব্রেস ব্যবহার করে থাকেন, যা ছোটখাটো মোচড় বা চিড় ধরা থেকে রক্ষা করে। আমি নিজে কখনো কখনো কব্জির জন্য হালকা ব্যান্ড ব্যবহার করি, কারণ এতে একটা অতিরিক্ত সাপোর্ট পাওয়া যায় এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবেও সুরক্ষা অনুভব করি। এগুলো হয়তো বিশাল আঘাত থেকে বাঁচাবে না, কিন্তু খেলার সময় ছোটখাটো ব্যথা বা অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে আপনাকে খেলায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।
দক্ষতার সিঁড়ি: আধুনিক প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম
বন্ধুরা, শুধুমাত্র বল আর নেট দিয়ে সব ট্রেনিং হয় না। আধুনিক ভলিবলে খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম দারুণ ভূমিকা রাখে। আমার ব্যক্তিগত ট্রেনিং রুটিনে আমি সবসময় কিছু বিশেষ সরঞ্জাম যোগ করি, কারণ আমি দেখেছি এগুলি আমার গতি, ক্ষিপ্রতা, এবং সামগ্রিক শারীরিক সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। প্রথমদিকে আমি মনে করতাম, শুধু নিয়মিত প্র্যাকটিস করলেই সব হয়ে যায়। কিন্তু যখনই আমি এজিলিটি ল্যাডার বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ডের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করা শুরু করলাম, তখন আমার খেলায় অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখতে পেলাম। আমার গতি দ্রুত হলো, লাফানোর শক্তি বাড়ল, আর সবথেকে বড় কথা, আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করলাম। এই সরঞ্জামগুলো শুধু শারীরিক দক্ষতা বাড়ায় না, বরং মনস্তাত্ত্বিকভাবেও আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে, যা খেলার মাঠে চাপ সামলানোর জন্য খুব দরকারি। আমার কোচের কাছ থেকে আমি এই সরঞ্জামগুলোর গুরুত্ব শিখেছি এবং এখন আমি এগুলো ছাড়া আমার ট্রেনিং রুটিন কল্পনাও করতে পারি না।
এজিলিটি ল্যাডার ও কোনস: গতি ও ক্ষিপ্রতা বাড়াতে
এজিলিটি ল্যাডার এবং কোনস হলো ভলিবল খেলোয়াড়দের গতি ও ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর জন্য দুটি অসাধারণ সরঞ্জাম। আমি আমার ট্রেনিং সেশনে প্রায় প্রতিদিনই এজিলিটি ল্যাডার ব্যবহার করি। ল্যাডারের ধাপগুলোর মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে পা ফেলা, দিক পরিবর্তন করা—এগুলো আমার পায়ের কাজকে অনেক দ্রুত এবং মসৃণ করে তোলে। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এজিলিটি ল্যাডার ব্যবহার করা শুরু করি, তখন আমার পাগুলো ঠিকমতো তাল মেলাতে পারতো না, কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনের পর এখন আমি অনেক দ্রুত আর নিখুঁতভাবে এগুলো করতে পারি। এটি আমার ডিফেন্স করার সময় বা স্পাইক মারার জন্য রান-আপ নেওয়ার সময় দ্রুত পজিশন নিতে সাহায্য করে। কোনসগুলো বিভিন্ন ড্রিলের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন দ্রুত দিক পরিবর্তন করা বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৌড়ানো। এগুলি খেলোয়াড়ের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং শরীরের নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই সরঞ্জামগুলো শুধু পায়ের গতিই বাড়ায় না, বরং চোখের সাথে পায়ের সমন্বয়কেও অনেক উন্নত করে তোলে, যা ভলিবলের মতো দ্রুতগতির খেলায় অত্যন্ত জরুরি।
রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড: শক্তি ও নমনীয়তার জন্য
রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ডগুলো দেখে হয়তো সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলি ভলিবল খেলোয়াড়দের শক্তি এবং নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য এক দুর্দান্ত সরঞ্জাম। আমি আমার ওয়ার্ম-আপ এবং স্ট্রেচিং রুটিনে নিয়মিত রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করি। এগুলি বিভিন্ন শক্তিশালী পেশী গ্রুপকে টার্গেট করে কাজ করে, যেমন পায়ের পেশী, কাঁধের পেশী, বা কোরের পেশী। আমি দেখেছি, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে জাম্পিং ড্রিল করলে পায়ের শক্তি অনেক বাড়ে, যা আমার স্পাইক এবং ব্লকিংয়ের উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, শোল্ডার রোটেশন ড্রিলের জন্য এগুলি অসাধারণ। আমার মনে আছে, একবার আমার কাঁধে সামান্য ব্যথা হয়েছিল, তখন ফিজিওথেরাপিস্ট আমাকে রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড দিয়ে কিছু এক্সারসাইজ করতে বলেছিলেন। সেগুলো করার পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই ব্যান্ডগুলো শুধু শক্তিই বাড়ায় না, বরং আঘাত থেকে দ্রুত সেরে উঠতে এবং পেশীর নমনীয়তা বাড়াতেও কতটা কার্যকর। বিভিন্ন রেজিস্ট্যান্স লেভেলের ব্যান্ড পাওয়া যায়, তাই নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক ব্যান্ড বেছে নেওয়াটা জরুরি।
বল নির্বাচন ও রক্ষণাবেক্ষণ
ভলিবল খেলার প্রাণকেন্দ্র হলো বল! একটি ভালো মানের বল ছাড়া ভলিবল ট্রেনিং আর ম্যাচ—দুটোই অসম্পূর্ণ। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমি অনেক রকম বল দিয়ে খেলেছি, আর প্রতিটি বলের অনুভূতি একেক রকম। সস্তা বলের সাথে ভালো মানের বলের পার্থক্যটা স্পষ্ট। ভালো মানের বলের গ্রিপ ভালো হয়, ওজন সঠিক থাকে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। যখন আমি একটা নতুন দলের সাথে খেলতে যাই, তখন প্রথমেই আমি বলগুলো পরখ করে নিই। যদি বল ভালো না হয়, তাহলে সার্ভ, স্পাইক বা পাসে বেশ অসুবিধা হয়। একটা ভালো বল খেলোয়াড়কে তার টেকনিক নিখুঁত করতে সাহায্য করে এবং খেলার প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। বলের সঠিক নির্বাচন যেমন জরুরি, তেমনি তার রক্ষণাবেক্ষণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো বলের যত্ন নিলে সেটি অনেক দিন টিকে থাকে এবং আপনাকে নিয়মিতভাবে সেরা পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।
সঠিক বল কীভাবে নির্বাচন করব
সঠিক ভলিবল নির্বাচন করাটা আপনার খেলার অভিজ্ঞতাকে অনেকটাই উন্নত করতে পারে। আমি যখন প্রথম বল কিনতে গিয়েছিলাম, তখন বাজারে এত ব্র্যান্ড আর মডেল দেখে বেশ দ্বিধায় পড়েছিলাম। পরে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের পরামর্শে বুঝতে পারি, কী কী বিষয় দেখতে হবে। প্রথমত, বলের ওজন এবং আকার ফিভবি (FIVB) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হতে হবে। সাধারণত, ইনডোর ভলিবলের জন্য সিন্থেটিক লেদার বা কম্পোজিট লেদারের বলগুলো ভালো হয়। আমার পছন্দের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে Mikasa এবং Molten হলো সেরা। Mikasa MVA200 বা Molten V5M5000 মডেলগুলো পেশাদার খেলোয়াড়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। এই বলগুলোর গ্রিপ খুব ভালো হয়, যা সার্ভ বা স্পাইক মারার সময় দারুণ নিয়ন্ত্রণ দেয়। এছাড়াও, বলের নরম অনুভূতি পাসিংয়ের সময় আরামদায়ক হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন বল পছন্দ করি যা হাতে নিতে হালকা মনে হলেও আঘাত করার সময় সঠিক ওজন অনুভব হয়। বল কেনার আগে অবশ্যই বাতাস চেক করে নেবেন; খুব বেশি বা খুব কম বাতাস থাকলে খেলার মজা নষ্ট হয়ে যায়।
আমার প্রিয় বলগুলো এবং তাদের যত্ন
আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে বেশ কিছু ভলিবল আছে, কিন্তু Mikasa MVA200 আমার প্রিয়। এই বলটা দিয়ে খেলাটা সত্যিই অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। এর নকশা, টেক্সচার আর ওজন—সবকিছুই একদম নিখুঁত। আমি দেখেছি, এই বল দিয়ে সার্ভ মারলে বা স্পাইক দিলে দারুণ কন্ট্রোল পাওয়া যায়, যা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এই প্রিয় বলগুলোর যত্ন নেওয়াটাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় চেষ্টা করি বলগুলোকে পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে। খেলার পর একটি নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিই যাতে কোনো ধুলো বা ময়লা লেগে না থাকে। এছাড়াও, বলগুলোতে যেন অতিরিক্ত বা কম বাতাস না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখি। একটি ছোট হ্যান্ড পাম্প এবং প্রেশার গেজ রাখাটা খুব জরুরি। আমি কখনোই বলগুলোকে সরাসরি সূর্যের আলোতে বা অতিরিক্ত ঠান্ডা জায়গায় রাখি না, কারণ এতে বলের মেটেরিয়াল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যখন আমি আমার বলগুলোর সঠিক যত্ন নিই, তখন সেগুলো আমাকে দীর্ঘ সময় ধরে সেরা সার্ভিস দেয়, যা একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার জন্য অত্যন্ত সন্তোষজনক।
খেলার বাইরেও প্রস্তুতি: হাইড্রেশন ও রিকভারি

শুধু মাঠে খেলাই সব নয়, খেলার বাইরের প্রস্তুতিটাও একজন ভলিবল খেলোয়াড়ের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে হাইড্রেশন আর রিকভারির গুরুত্বটা বুঝতাম না। ভাবতাম, খেলার পর একটু বিশ্রাম নিলেই হলো। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে, তত বুঝেছি যে, সঠিক হাইড্রেশন এবং পেশী রিকভারি ছাড়া একজন খেলোয়াড় কখনোই তার সেরাটা দিতে পারে না। আমার মনে আছে, একবার একটা দীর্ঘ ম্যাচ খেলার পর আমি এতটাই ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়েছিলাম যে, পরের দুদিন আমার পক্ষে কোনো ট্রেনিং করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই আমি পানির বোতল, ইলেকট্রোলাইট ড্রিঙ্কস এবং ফোম রোলারের মতো সরঞ্জামগুলো আমার ট্রেনিং কিটের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছি। এগুলো আমাকে দ্রুত চাঙ্গা হতে এবং পরের ট্রেনিং সেশনের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। আমার মনে হয়, একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের জন্য এটা একটা বিনিয়োগের মতো, যা আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ আর শক্তিশালী রাখবে।
পানির বোতল: মাঠে ও মাঠের বাইরে অপরিহার্য
পানির বোতল! হ্যাঁ বন্ধুরা, এটি হয়তো সবচেয়ে সাধারণ সরঞ্জাম, কিন্তু এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভলিবল খেলার সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে, ফলে শরীর দ্রুত ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ডিহাইড্রেশন শুধু আপনার শারীরিক শক্তিই কমায় না, বরং আপনার মনোযোগ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। আমি সবসময় আমার সাথে একটি বড় পানির বোতল রাখি, যেখানে পর্যাপ্ত পানি বা ইলেকট্রোলাইট ড্রিঙ্কস থাকে। বিশেষ করে, তীব্র গরমে বা দীর্ঘ ট্রেনিং সেশনে, আমি প্রতি ১৫-২০ মিনিট পর পর অল্প অল্প করে পানি পান করি। আমার মনে আছে, একবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আমি পর্যাপ্ত পানি পান করিনি, তার ফলস্বরূপ মাঝেমধ্যেই আমার পেশীতে টান ধরছিল এবং আমি আমার স্বাভাবিক শক্তি পাচ্ছিলাম না। তাই, একটি ভালো মানের, সহজে বহনযোগ্য পানির বোতল রাখাটা যেকোনো ভলিবল খেলোয়াড়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ফোম রোলার ও স্ট্রেচিং টুলস: পেশীর যত্নে
খেলাধুলায় যেমন পেশীর ওপর চাপ পড়ে, তেমনি সেই পেশীগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়াও সমান জরুরি। আমি আমার ট্রেনিংয়ের পর এবং ম্যাচের শেষে সবসময় ফোম রোলার এবং অন্যান্য স্ট্রেচিং টুলস ব্যবহার করি। এই জিনিসগুলো পেশীর ব্যথা কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং নমনীয়তা বজায় রাখতে দারুণ কাজ করে। আমার মনে আছে, শুরুর দিকে যখন আমি ফোম রোলার ব্যবহার করা শুরু করি, তখন প্রথম কয়েকদিন বেশ ব্যথা অনুভব করতাম, কিন্তু এর উপকারিতা ছিল অবিশ্বাস্য। আমার পেশীগুলো দ্রুত রিকভার হতো এবং পরের ট্রেনিং সেশনের জন্য আমি আরও বেশি প্রস্তুত থাকতাম। এছাড়াও, আমি নিয়মিত স্ট্রেচিং ব্যান্ড বা রেসিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করি, যা আমার পেশীগুলোকে লম্বা এবং নমনীয় রাখে। এগুলো পেশীর টান বা ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। আমি আমার বন্ধুদেরও সবসময় এই সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দিই, কারণ সুস্থ পেশী মানেই দীর্ঘস্থায়ী এবং ভালো পারফরম্যান্স।
পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্য: আরামদায়ক খেলার সরঞ্জাম
ভলিবল খেলার সময় পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্য কিন্তু আপনার পারফরম্যান্সের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশ্বাস করুন বা না করুন, একবার আমি একটি টাইট জার্সি পরে খেলতে গিয়েছিলাম, যা আমার মুভমেন্টকে এতটাই বাধা দিচ্ছিল যে আমি ঠিকমতো স্পাইকও মারতে পারছিলাম না। আমার মনে আছে, সেই ম্যাচটা আমার জন্য খুব হতাশাজনক ছিল। এরপর থেকে আমি সবসময় আরামদায়ক এবং শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য কাপড়ের পোশাক বেছে নিই। জার্সি, শর্টস বা এমনকি মোজা—সবকিছুই এমন হতে হবে যা আপনাকে মাঠে চলাফেরার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয় এবং ঘাম শোষণ করে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। যখন আপনার পোশাক আরামদায়ক হয়, তখন আপনি খেলাতেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন, অন্য কোনো অস্বস্তিতে আপনার মন বিক্ষিপ্ত হয় না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সঠিক পোশাক শুধু শারীরিক আরামই দেয় না, মানসিক আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।
সঠিক জার্সি ও শর্টস: পারফরম্যান্সে প্রভাব
সঠিক জার্সি এবং শর্টস নির্বাচন করাটা আপনার ভলিবল পারফরম্যান্সের জন্য অপরিহার্য। আমার মনে আছে, যখন আমি প্রথম খেলা শুরু করি, তখন যেকোনো টি-শার্ট আর শর্টস পরেই খেলতে চলে যেতাম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমি বুঝতে পারি যে, সাধারণ পোশাক আর ভলিবলের জন্য তৈরি পোশাকের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। ভলিবল জার্সিগুলো সাধারণত হালকা, ঘাম শোষণকারী এবং দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এর ফলে খেলার সময় শরীর ঠান্ডা থাকে এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে পোশাক ভারী মনে হয় না। শর্টসগুলোও এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে লাফানো, দৌড়ানো বা ডাইভ দেওয়ার সময় কোনোরকম বাধা সৃষ্টি না হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে Lycra বা পলিয়েস্টার মিশ্রিত কাপড়ের শর্টস পছন্দ করি কারণ এগুলি নমনীয় এবং যথেষ্ট প্রসারিত হয়। এছাড়াও, জার্সি এবং শর্টসের সঠিক মাপও গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি ঢিলা পোশাক আপনার মুভমেন্টকে বাধা দিতে পারে, আবার খুব বেশি টাইট পোশাক অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
ব্যক্তিগত পছন্দ: কী পরি আমার সেরাটা পেতে?
পোশাকের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ থাকে, যা তাদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে। আমি নিজে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আমার সেরা কম্বিনেশনটা খুঁজে পেয়েছি। আমি সবসময় একটি হালকা ও আরামদায়ক, ঘাম শোষণকারী জার্সি পরি। রংটা উজ্জ্বল হলে আমার মনটা সতেজ লাগে। শর্টসের ক্ষেত্রে আমি একটু ঢিলেঢালা ধরনের শর্টস পছন্দ করি, যা হাঁটু পর্যন্ত না হলেও বেশ কিছুটা নিচে থাকে, যাতে ডাইভ দেওয়ার সময় পায়ের উরু সুরক্ষিত থাকে। মোজার ক্ষেত্রে, আমি বিশেষ স্পোর্টস সক্স ব্যবহার করি যা পা ঘাম থেকে বাঁচায় এবং বুটের ভেতরে ফোসকা পড়া রোধ করে। আমার মনে আছে, একবার ভুল করে সুতির মোজা পরে খেলতে গিয়ে আমার পায়ে মারাত্মক ফোস্কা পড়েছিল, যা আমাকে পুরো এক সপ্তাহ ভুগিয়েছিল। সেই থেকে আমি মোজার ব্যাপারেও খুব সতর্ক। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো হয়তো আপাতদৃষ্টিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও, খেলার মাঠে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারফরম্যান্সের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে।
শক্তি ও সহনশীলতার ভিত্তি: সাপ্লিমেন্টাল ট্রেনিং গ্যাজেটস
বন্ধুরা, ভলিবল শুধু কৌশল আর দক্ষতার খেলা নয়, এর জন্য প্রয়োজন হয় অসাধারণ শারীরিক শক্তি এবং সহনশীলতা। আমার নিজস্ব ট্রেনিং রুটিনে আমি সবসময় কিছু সাপ্লিমেন্টাল গ্যাজেটস যোগ করি যা আমাকে মাঠের বাইরেও আমার শরীরকে আরও শক্তিশালী এবং সক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে। আমার মনে আছে, প্রথম যখন আমি ওজন ট্রেনিং শুরু করি, তখন আমার পেশীগুলো খুব দুর্বল ছিল। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনের পর আমি বুঝতে পারলাম যে, এই ধরনের ট্রেনিং আমার স্পাইক, ব্লকিং এবং সামগ্রিক খেলার ক্ষমতাকে কতটা উন্নত করেছে। এই গ্যাজেটসগুলো আপনাকে আপনার শারীরিক সীমা অতিক্রম করতে সাহায্য করে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আমি দেখেছি, যারা শুধু মাঠে ভলিবল প্র্যাকটিস করে, তাদের চেয়ে যারা এই ধরনের সাপ্লিমেন্টাল ট্রেনিং করে, তারা খেলায় অনেক বেশি ধারাবাহিকতা এবং শক্তি প্রদর্শন করতে পারে। এগুলি আসলে আপনার খেলার ভিত্তি মজবুত করে।
জাম্প রোপ ও ওজন: শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে
জাম্প রোপ বা দড়ি লাফ এবং হালকা ওজন ভলিবল খেলোয়াড়দের জন্য অসাধারণ কিছু সাপ্লিমেন্টাল গ্যাজেটস। আমি আমার ওয়ার্ম-আপ রুটিনের একটা বড় অংশ হিসেবে প্রতিদিন জাম্প রোপ ব্যবহার করি। এটা শুধু আমার কার্ডিওভাসকুলার সহনশীলতা বাড়ায় না, বরং পায়ের পেশীগুলোকে দ্রুত এবং শক্তিশালী করে তোলে, যা ভলিবলে লাফানোর জন্য অপরিহার্য। আমার মনে আছে, প্রথম যখন আমি জাম্প রোপ শুরু করি, তখন একটানা এক মিনিটও লাফাতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমি অনায়াসে ১৫-২০ মিনিট জাম্প রোপ করতে পারি। এছাড়াও, হালকা ওজন যেমন ডাম্বেল বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড সহ ওজন প্লেট ব্যবহার করে আমি আমার কাঁধ, বাহু এবং পায়ের শক্তি বাড়াই। এই ওজন ট্রেনিংগুলো আমার স্পাইকের গতি এবং ব্লকিংয়ের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। আমি দেখেছি, নিয়মিত ওজন ট্রেনিং করলে ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়, কারণ পেশীগুলো আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল হয়।
ফিটনেস ট্র্যাকার: নিজের উন্নতি পরখে
আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো ভলিবল খেলোয়াড়দের জন্য একটি দারুণ সরঞ্জাম। আমি নিজে একটি ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করি এবং এটি আমাকে আমার ট্রেনিং ডেটা এবং শারীরিক উন্নতির একটি পরিষ্কার চিত্র দেয়। এই ট্র্যাকারগুলো আমার হার্ট রেট, পোড়া ক্যালরি, পদক্ষেপের সংখ্যা এবং ঘুমের ধরণ ট্র্যাক করে। আমার মনে আছে, একবার আমি মনে করতাম যে আমি যথেষ্ট ট্রেনিং করছি, কিন্তু ফিটনেস ট্র্যাকারের ডেটা দেখে বুঝতে পারি যে আমার আরও বেশি পরিশ্রম করা উচিত। এটি আমাকে আমার ট্রেনিং সেশনগুলো আরও কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। আমি দেখি আমার ওয়ার্কআউটের তীব্রতা কেমন ছিল, কতক্ষণ আমি উচ্চ হার্ট রেটে ছিলাম, এবং আমার রিকভারি কেমন হচ্ছে। এই তথ্যগুলো আমাকে আমার কোচের সাথে আলোচনার সময়ও অনেক সাহায্য করে। এটি শুধু পারফরম্যান্স ট্র্যাক করে না, বরং আপনাকে নিজেকে উন্নত করার জন্য অনুপ্রাণিতও করে, যা একজন ভলিবল খেলোয়াড়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
| সরঞ্জাম | গুরুত্ব | ব্যক্তিগত পরামর্শ |
|---|---|---|
| ভলিবল জুতা | আঘাত সুরক্ষা, গতি ও ভারসাম্য বৃদ্ধি | Mizuno বা ASICS এর মডেল, নন-মার্কিং সোল ও গোড়ালি সাপোর্ট |
| হাঁটুর প্যাড | ডাইভ ও ফ্লোর ডিফেন্সে আঘাত প্রতিরোধ | ভালো কুশনিং ও সঠিক মাপের প্যাড |
| রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড | পেশী শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি | বিভিন্ন রেজিস্ট্যান্স লেভেলের ব্যান্ড সংগ্রহে রাখুন |
| Mikasa/Molten বল | সঠিক গ্রিপ, নিয়ন্ত্রণ ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব | FIVB স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বল, সঠিক বাতাসের চাপ |
| পানির বোতল | শারীরিক হাইড্রেশন ও মনোযোগ বৃদ্ধি | বড় ধারণক্ষমতার, সহজে বহনযোগ্য বোতল |
| ফোম রোলার | পেশী রিকভারি ও ব্যথা উপশম | নিয়মিত ব্যবহার করুন, ছোট ও বড় উভয় আকারের রোলার |
| ফিটনেস ট্র্যাকার | শারীরিক ডেটা পর্যবেক্ষণ ও উন্নতি | হার্ট রেট, ক্যালরি ও স্লিপ ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা |
গল্পের শেষে কিছু কথা
বন্ধুরা, ভলিবল খেলার জগতে আমরা যতই এগিয়ে যাই না কেন, একটা জিনিস বারবার প্রমাণিত হয়—তা হলো সঠিক প্রস্তুতি আর সঠিক সরঞ্জাম ছাড়া আপনার সেরাটা দেওয়া সম্ভব নয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি নিজে অসংখ্যবার এই সত্যটা উপলব্ধি করেছি। পায়ের সুরক্ষায় ভালো জুতা থেকে শুরু করে আঘাত প্রতিরোধের প্যাড, দক্ষতার প্রশিক্ষণে আধুনিক সরঞ্জাম, এমনকি মাঠের বাইরের হাইড্রেশন আর রিকভারি—সবকিছুই আপনার খেলার মান এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আশা করি আমার অভিজ্ঞতা আর পরামর্শগুলো আপনাদের ভলিবল যাত্রায় কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, নিজের যত্ন নিলে, মাঠেই হোক বা মাঠের বাইরে, আপনার পারফরম্যান্স আপনাআপনিই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
কয়েকটি জরুরি টিপস
১. আপনার পায়ের গঠন অনুযায়ী ভলিবল জুতা বেছে নিন, যা আপনার গোড়ালি এবং পায়ের পাতাকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেবে এবং ইনজুরি থেকে বাঁচাবে।
২. অনুশীলনে এবং ম্যাচে অবশ্যই হাঁটুর প্যাড এবং প্রয়োজনে কনুই প্যাড ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যদি আপনি ডাইভ বা ফ্লোর ডিফেন্সে সক্রিয় থাকেন।
৩. এজিলিটি ল্যাডার, কোনস এবং রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ডের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে আপনার গতি, ক্ষিপ্রতা এবং পেশী শক্তি নিয়মিত বাড়াতে থাকুন।
৪. খেলার আগে, খেলার সময় এবং খেলার পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিঙ্কস পান করে শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করুন।
৫. ট্রেনিংয়ের পর ফোম রোলার এবং স্ট্রেচিং টুলস ব্যবহার করে পেশী রিকভারি এবং নমনীয়তা বজায় রাখুন, যা ইনজুরি প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্ষেপ
ভলিবল খেলায় সেরা পারফরম্যান্স দিতে হলে সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং মাঠের বাইরের প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। ভালো ভলিবল জুতা পায়ের সুরক্ষা ও গতি বাড়ায়, প্রতিরক্ষামূলক প্যাড আঘাতের ঝুঁকি কমায়। আধুনিক প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম যেমন এজিলিটি ল্যাডার, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড এবং হালকা ওজন খেলোয়াড়ের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। Mikasa বা Molten-এর মতো ভালো মানের বল খেলাকে আরও উপভোগ্য করে তোলে এবং সঠিক যত্নে দীর্ঘদিন টিকে থাকে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং ফোম রোলারের মতো রিকভারি টুলস পেশীর সুস্থতা ও খেলোয়াড়ের দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে। আরামদায়ক পোশাক এবং ফিটনেস ট্র্যাকারও আপনার সামগ্রিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে সহায়ক।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ভলিবল ট্রেনিংয়ের জন্য একেবারে শুরুতেই কোন সরঞ্জামগুলো কেনা সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
উ: আমার দীর্ঘদিনের ভলিবল খেলার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, নতুন যারা ভলিবল শুরু করছেন, তাদের জন্য প্রথমেই খুব বেশি দামি বা প্রফেশনাল সরঞ্জাম কেনার দরকার নেই। বরং কিছু মৌলিক জিনিস দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়। প্রথমেই যেটা লাগবে, সেটা হলো একটা ভালো মানের ভলিবল। হ্যাঁ, বাজারে অনেক রকম ভলিবল পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুর দিকে একটা টেকসই, হাতে ধরতে আরামদায়ক বলই যথেষ্ট। এরপর আমার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জুতো। ভলিবলের জন্য তৈরি ভালো গ্রিপের জুতো না হলে মাঠে দ্রুত নড়াচড়া করতে বা লাফাতে গিয়ে চোট পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমি নিজে একবার ভুল জুতো পরে খেলতে গিয়ে স্লিপ করেছিলাম, যা বেশ কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল। তাই এই বিষয়ে কোনো আপোস নয়। আর হ্যাঁ, অনেক সময় হাতের কব্জিতে বা হাঁটুতে হালকা চোট লাগতে পারে, তাই একটা ভালো মানের ব্রেস বা নি-প্যাডও কিন্তু জরুরি। এগুলো আপনাকে নিরাপদ রাখবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে সাহায্য করবে।
প্র: এই ট্রেনিং সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে আমাদের খেলায় ঠিক কী ধরনের উন্নতি হতে পারে? ব্যক্তিগতভাবে আপনি কেমন ফল পেয়েছেন?
উ: দারুণ প্রশ্ন! শুধু সরঞ্জাম কিনলেই তো হবে না, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার আর তার সুফল জানাটাও জরুরি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, উপযুক্ত সরঞ্জাম আপনার পারফরম্যান্সকে অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন ধরুন, ভালো গ্রিপের ভলিবল আপনাকে আরও নির্ভুলভাবে সার্ভিস দিতে, পাস করতে বা স্ম্যাশ করতে সাহায্য করবে। যখন আপনি জানেন যে বলটা আপনার হাত থেকে ঠিকমতো কন্ট্রোল হচ্ছে, তখন আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। আর যে জুতোটার কথা বলছিলাম, সেটা আপনাকে কোর্টে দ্রুত নড়াচড়া করতে, লাফাতে এবং হঠাৎ দিক পরিবর্তন করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। এর ফলে আপনি প্রতিপক্ষের শটগুলো আরও ভালোভাবে ডিফেন্ড করতে পারবেন এবং অ্যাটাকের সুযোগও তৈরি করতে পারবেন। আমি নিজে যখন উপযুক্ত জুতো ব্যবহার করা শুরু করি, তখন আমার লাফানোর ক্ষমতা এবং কোর্টে গতি অনেক বেড়ে যায়, যা আমার খেলায় একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছিল। নি-প্যাড এবং কব্জির ব্রেস থাকলে চোটের ভয় কম থাকে, আর মন দিয়ে খেলা যায়। এতে আমার ট্রেনিং সেশনগুলো আরও ফলপ্রসূ হয়েছিল।
প্র: বাজারে তো কত রকমের ভলিবল ট্রেনিং সরঞ্জাম পাওয়া যায়। সব কি খুব দামি হতে হয়, নাকি কম বাজেটেও ভালো মানের জিনিস খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
উ: একদম সত্যি কথা! এই প্রশ্নটা অনেকেই আমাকে করেন, আর আমিও যখন প্রথম প্রথম খেলতাম, তখন এই একই চিন্তা আমার মনে আসতো। আমার অভিজ্ঞতা বলে, সব সময় যে সবচেয়ে দামি জিনিসটাই সেরা হবে, এমন কোনো কথা নেই। হ্যাঁ, কিছু ব্র্যান্ড আছে যারা বেশ ভালো মানের পণ্য তৈরি করে, কিন্তু তাদের দামও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে এর মানে এই নয় যে কম বাজেটে ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। আপনি যদি একটু খোঁজ করেন, বিভিন্ন অনলাইন স্টোর বা লোকাল স্পোর্টস শপে মাঝারি দামের মধ্যে খুব ভালো মানের ভলিবল, জুতো বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস খুঁজে পাবেন। কেনার আগে পণ্যের রিভিউগুলো দেখতে পারেন বা পরিচিত যারা ভলিবল খেলেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। আমি নিজে এমন অনেক সস্তা জিনিস ব্যবহার করেছি যা বছরের পর বছর ভালো সার্ভিস দিয়েছে। আসল কথা হলো, আপনার প্রয়োজনটা কী এবং আপনি সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন কিনা। বুদ্ধি করে কেনাকাটা করলে, পকেট ফাঁকা না করেও আপনি খেলার জন্য সেরা সরঞ্জামগুলো পেয়ে যাবেন।






